সৈয়দপুর ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নামে জুয়েল বিএস, কাজে কৃষিজীবি, দেখিয়েছেন বস্তায় আদাচাষে চমক

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫ ১৪৯ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির: সবাই ডাকেন জুয়েল বিএস (ব্লক সুপারভাইজার)। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার এক সময়ের পদবী ছিল বিএস। কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল(৪২) আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। অন্যদের একইভাবে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই এলাকায় জুয়েল বিএস নামে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি প্রতিটি ফসল চাষাবাদে পেয়েছেন সফলতা । এবারেও অল্প জমি, স্বল্প খরচে মিলছে তার বস্তায় আদা চাষে সফলতা। সকলের কাছে তিনি নন্দিত কৃষিজীবি মানুষ।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কোরানীপাড়ার চাষী জুয়েল পতিত ও ছায়াযুক্ত জমিতে থাইল্যান্ড জাতের আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন।

রাস্তা সংলগ্ন ২০ শতক জমিতে বস্তার আদা সাড়ি সাড়ি কাঁধ বরাবর উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজ ও হলুদ রঙ্গের থোঁকা থোঁকা আদার গাছ। সহজে দেখা মেলেনা এমন আদা। জুয়েল বিএস বলে কথা! নিজের আদা চাষে তিনি মুন্সিআনা দেখিয়েছেন। ১ হাজার ২শত বস্তায় চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তিনি আদা রোপণ করেন। এর মধ্যে ২ শত বস্তা আদা পঁচে গেছে। এখন ১ হাজার বস্তার আদা বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি দপ্তর প্রয়োজনিয় পরামর্শ, ১২০০ টাকা , কিটনাশক ও ছত্রাকনাশক ঔষধ দিয়ে সহায়তা দিয়েছে। সব মিলে তার খরচ মাত্র ১০ হাজার টাকা।

চাষী জুয়েল জানিয়েছেন, প্রতিটি বস্তায় কমপক্ষে দেড় কেজি করে আদা পাবেন। আর ৪৫ দিনের মধ্যে কোন বিপর্যয় না হলে দেড় লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবারই প্রথম তিনি বস্তায় আদা চাষ করেন। পৌত্রিকসুত্রে প্রায় ৪ বিঘার মত জমি পেয়েছেন ভাগে। বিষমুক্ত সব্জিচাষ করে থাকেন। তাই তার ফসল ক্ষেত থেকেই নিয়ে যান স্থানীয় ভোক্তা ও পাইকাররা। চড়ে দামেই ফসল বিক্রি হয়। প্রতিটি ফসলেই তার লাভ আসে। তাই এখন বিএস খ্যাত জুয়েলের জীবণ বদলে গেছে। চাষাবাদের পাশাপশি তিনি শাক-সব্জির প্রত্যয়িত বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। সবই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর। এতে তার বাড়তি আয় আসে। জুয়েল এলাকার কৃষকদের কাছে আস্থার প্রতীক।
ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক দেলোয়ার বলেন, জুয়েলের পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করে ফসল চাষে লোকসান আসেনি। প্রত্যেকেই লাভ করেছে। তাই সবাই তাকে জুয়েল বিএস হিসাবে ডাকে।

এই এলাকার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আউয়াল জানান, জুয়েলকে আমরা কয়েকবার আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তার প্রশিক্ষণলব্দ অভিজ্ঞতা দিয়ে আদাচাষে চমক দেখিয়েছেন। এলাকার কৃষিজীবি মানুষ তাকে অনুসরণ করে আগামীতে বস্তায় আদাচাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান হাকিম বলেন, নীলফামারী জেলা এক সময় আদা চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। সমতল জমিতে আদাচাষে রোগ বালাই ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আবাদে লোকসান করে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বস্তায় আদাচাষে মড়ক কম হওয়ার কারণে এটি এখন লাভজনক ফসলে রূপ পেয়েছে। জুয়েলের মত অনেকেই বস্তায় আদাচাষে এখন ঝুঁকছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


নামে জুয়েল বিএস, কাজে কৃষিজীবি, দেখিয়েছেন বস্তায় আদাচাষে চমক

আপডেট সময় : ০৩:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

ফজল কাদির: সবাই ডাকেন জুয়েল বিএস (ব্লক সুপারভাইজার)। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার এক সময়ের পদবী ছিল বিএস। কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল(৪২) আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। অন্যদের একইভাবে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই এলাকায় জুয়েল বিএস নামে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি প্রতিটি ফসল চাষাবাদে পেয়েছেন সফলতা । এবারেও অল্প জমি, স্বল্প খরচে মিলছে তার বস্তায় আদা চাষে সফলতা। সকলের কাছে তিনি নন্দিত কৃষিজীবি মানুষ।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কোরানীপাড়ার চাষী জুয়েল পতিত ও ছায়াযুক্ত জমিতে থাইল্যান্ড জাতের আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন।

রাস্তা সংলগ্ন ২০ শতক জমিতে বস্তার আদা সাড়ি সাড়ি কাঁধ বরাবর উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজ ও হলুদ রঙ্গের থোঁকা থোঁকা আদার গাছ। সহজে দেখা মেলেনা এমন আদা। জুয়েল বিএস বলে কথা! নিজের আদা চাষে তিনি মুন্সিআনা দেখিয়েছেন। ১ হাজার ২শত বস্তায় চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তিনি আদা রোপণ করেন। এর মধ্যে ২ শত বস্তা আদা পঁচে গেছে। এখন ১ হাজার বস্তার আদা বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি দপ্তর প্রয়োজনিয় পরামর্শ, ১২০০ টাকা , কিটনাশক ও ছত্রাকনাশক ঔষধ দিয়ে সহায়তা দিয়েছে। সব মিলে তার খরচ মাত্র ১০ হাজার টাকা।

চাষী জুয়েল জানিয়েছেন, প্রতিটি বস্তায় কমপক্ষে দেড় কেজি করে আদা পাবেন। আর ৪৫ দিনের মধ্যে কোন বিপর্যয় না হলে দেড় লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবারই প্রথম তিনি বস্তায় আদা চাষ করেন। পৌত্রিকসুত্রে প্রায় ৪ বিঘার মত জমি পেয়েছেন ভাগে। বিষমুক্ত সব্জিচাষ করে থাকেন। তাই তার ফসল ক্ষেত থেকেই নিয়ে যান স্থানীয় ভোক্তা ও পাইকাররা। চড়ে দামেই ফসল বিক্রি হয়। প্রতিটি ফসলেই তার লাভ আসে। তাই এখন বিএস খ্যাত জুয়েলের জীবণ বদলে গেছে। চাষাবাদের পাশাপশি তিনি শাক-সব্জির প্রত্যয়িত বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। সবই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর। এতে তার বাড়তি আয় আসে। জুয়েল এলাকার কৃষকদের কাছে আস্থার প্রতীক।
ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক দেলোয়ার বলেন, জুয়েলের পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করে ফসল চাষে লোকসান আসেনি। প্রত্যেকেই লাভ করেছে। তাই সবাই তাকে জুয়েল বিএস হিসাবে ডাকে।

এই এলাকার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আউয়াল জানান, জুয়েলকে আমরা কয়েকবার আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তার প্রশিক্ষণলব্দ অভিজ্ঞতা দিয়ে আদাচাষে চমক দেখিয়েছেন। এলাকার কৃষিজীবি মানুষ তাকে অনুসরণ করে আগামীতে বস্তায় আদাচাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান হাকিম বলেন, নীলফামারী জেলা এক সময় আদা চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। সমতল জমিতে আদাচাষে রোগ বালাই ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আবাদে লোকসান করে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বস্তায় আদাচাষে মড়ক কম হওয়ার কারণে এটি এখন লাভজনক ফসলে রূপ পেয়েছে। জুয়েলের মত অনেকেই বস্তায় আদাচাষে এখন ঝুঁকছেন।