সৈয়দপুর ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিবারের একমাত্র অবলম্বন মজিবার লোহার শিকলে বাঁধা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২ ৩২ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির: ছিন্নমূল পরিবারের একমাত্র উপার্জনের
অবলম্বন মজিবার রহমান (৬৫)। প্রায় দু’বছর হলো
তিনি লোহার শিকল দিয়ে গাছে বাঁধা। এক সময়ের
কর্মঠ কৃষি শ্রমিক মজিবার মানসিক ভারসাম্যহীন এখন। তাই সরসারের হাল ধরতে স্ত্রী আনিছা বেছে নিয়েছেন ঝি এর কাজ। তার বয়স ষাট ডিঙ্গিয়েছে। গতর দিয়ে ঝি খেটে আয় হয় সামান্য। স্বল্প আয়ে সংসারের চাকা যেন ঘুরতে চায়না।

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী
ইউনিয়নের পেসকিপাড়ায় বাড়ী( নিতাই ইউনিয়নের ফড়–য়াপাড়া সংলগ্ন) ওই অসহায় দম্পতির।

রাস্তার পাশেই লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা মজিবার। অবাধ্য জন্তুর মত যেন বেঁধে রাখা হয়েছে হেলে থাকা একটি বটগাছে। মজিবার মুক্ত থাকলে নাকি লঙ্কাকান্ড ঘটান বলে স্ত্রী আনিছা জানান।

উলঙ্গ হওয়া, রোদে শুকাতে দেয়া কাপড় ফেলে দিয়ে
দুমড়ে-মুচড়ে দেয়া, বাঁশবাগানে থাকা কাঁচা মল
নিজের শরীরে মাখা ও অন্যদের তাড়া করা সহ অনেক
কিছুই তছনছ করতেন মজিবার। তাই স্ত্রী ও
প্রতিবেশীরা বাধ্য হয়েই লোহার শিকলে বেঁধেরাখেন। দিনে গাছে আর রাতে বিছানার সাথে থাকা
বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয় মজিবারকে।
স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই ওই পরিবারে। মজিবারের ছোট বোন দুটি অনেক দুরে থাকেন স্বামী-সন্তান নিয়ে। ভাই দুটি থাকেন ভিন্ন গ্রামে। একমাত্র সন্তান মজিয়া আক্তার(৪৫) স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আপনজন কেউ না থাকায় একাই হিমসিম খান আনিছা।

গ্রামের তরপু মিয়া বলেন, মজিবার এক সময় কৃষি কাজে ভীষণ কর্মঠ ছিল। প্রায় ১২ বছর আগে বগুড়ায় ধান কাটার জন্য বাসের ছাদে করে যাচ্ছিল। পথে গাছের ডালের আঘাতে তার মাথায় জখম হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ্য হলেও পরে প্রায় অসুস্থ্য হয়ে পরতেন। প্রায় দুই বছর আগে মজিবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।স্বামীকে নাওয়া-খাওয়া আর টানা-হেচরা করতে অনেকটা সময় ব্যায় করতে হয় আনিছাকে। ঝি’র কাজও ঠিক মত করা হয়ে উঠেনা। তাই সরসারে অনটন পিছু ছাড়ে না। উপোষ থাকলে প্রতিবেশীরা কখনো পাশে দাঁড়ায়।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোন সুফল আজো পায়নি এই অসহায় পরিবারটি।

পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম
লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা আমার
কাছে কাগজপত্র সহ যোগাযোগ করলে একটা ব্যবস্থা
করে দেব।

স্বামীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা হলে
আনিছা জানান, ’বাবা নুন আনতে পন্তা ফুরায়,
ওমার ককতোন মুই চেকেৎসা করো ? সামনেরদিনগুলো কিভাবে কাটবে তার নিয়ে ভাবতে গিতে
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আনিছা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


পরিবারের একমাত্র অবলম্বন মজিবার লোহার শিকলে বাঁধা

আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

ফজল কাদির: ছিন্নমূল পরিবারের একমাত্র উপার্জনের
অবলম্বন মজিবার রহমান (৬৫)। প্রায় দু’বছর হলো
তিনি লোহার শিকল দিয়ে গাছে বাঁধা। এক সময়ের
কর্মঠ কৃষি শ্রমিক মজিবার মানসিক ভারসাম্যহীন এখন। তাই সরসারের হাল ধরতে স্ত্রী আনিছা বেছে নিয়েছেন ঝি এর কাজ। তার বয়স ষাট ডিঙ্গিয়েছে। গতর দিয়ে ঝি খেটে আয় হয় সামান্য। স্বল্প আয়ে সংসারের চাকা যেন ঘুরতে চায়না।

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী
ইউনিয়নের পেসকিপাড়ায় বাড়ী( নিতাই ইউনিয়নের ফড়–য়াপাড়া সংলগ্ন) ওই অসহায় দম্পতির।

রাস্তার পাশেই লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা মজিবার। অবাধ্য জন্তুর মত যেন বেঁধে রাখা হয়েছে হেলে থাকা একটি বটগাছে। মজিবার মুক্ত থাকলে নাকি লঙ্কাকান্ড ঘটান বলে স্ত্রী আনিছা জানান।

উলঙ্গ হওয়া, রোদে শুকাতে দেয়া কাপড় ফেলে দিয়ে
দুমড়ে-মুচড়ে দেয়া, বাঁশবাগানে থাকা কাঁচা মল
নিজের শরীরে মাখা ও অন্যদের তাড়া করা সহ অনেক
কিছুই তছনছ করতেন মজিবার। তাই স্ত্রী ও
প্রতিবেশীরা বাধ্য হয়েই লোহার শিকলে বেঁধেরাখেন। দিনে গাছে আর রাতে বিছানার সাথে থাকা
বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয় মজিবারকে।
স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই ওই পরিবারে। মজিবারের ছোট বোন দুটি অনেক দুরে থাকেন স্বামী-সন্তান নিয়ে। ভাই দুটি থাকেন ভিন্ন গ্রামে। একমাত্র সন্তান মজিয়া আক্তার(৪৫) স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আপনজন কেউ না থাকায় একাই হিমসিম খান আনিছা।

গ্রামের তরপু মিয়া বলেন, মজিবার এক সময় কৃষি কাজে ভীষণ কর্মঠ ছিল। প্রায় ১২ বছর আগে বগুড়ায় ধান কাটার জন্য বাসের ছাদে করে যাচ্ছিল। পথে গাছের ডালের আঘাতে তার মাথায় জখম হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ্য হলেও পরে প্রায় অসুস্থ্য হয়ে পরতেন। প্রায় দুই বছর আগে মজিবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।স্বামীকে নাওয়া-খাওয়া আর টানা-হেচরা করতে অনেকটা সময় ব্যায় করতে হয় আনিছাকে। ঝি’র কাজও ঠিক মত করা হয়ে উঠেনা। তাই সরসারে অনটন পিছু ছাড়ে না। উপোষ থাকলে প্রতিবেশীরা কখনো পাশে দাঁড়ায়।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোন সুফল আজো পায়নি এই অসহায় পরিবারটি।

পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম
লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা আমার
কাছে কাগজপত্র সহ যোগাযোগ করলে একটা ব্যবস্থা
করে দেব।

স্বামীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা হলে
আনিছা জানান, ’বাবা নুন আনতে পন্তা ফুরায়,
ওমার ককতোন মুই চেকেৎসা করো ? সামনেরদিনগুলো কিভাবে কাটবে তার নিয়ে ভাবতে গিতে
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আনিছা।