সৈয়দপুরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

মো. মারুফ হোসেন (লিয়ন)
- আপডেট সময় : ০৫:৫০:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২৭ বার পড়া হয়েছে

মো. মারুফ হোসেন লিয়ন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে এ বছর ৭৩টি পূজা মন্ডপে চলছে দুর্গোৎসব। গত বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৮২ টি। এ বছর মন্ডপের সংখ্যা কমেছে ৯টি। বর্তমানে মন্ডপগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মির্জা মোঃ আবু ছাইদ জানান, এবার সৈয়দপুর উপজেলায় ৭৩টি পূজা মন্ডপ। তার মধ্যে সৈয়দপুর পৌর এলাকায় মন্ডপ রয়েছে ১৬টি। গত বছর পৌর এলাকায় মন্ডপ ছিল ১৭টি। এবার উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে ৬টি,গত বছর ছিল ৭টি। কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে ৯টি,গত বছর ছিল ১১টি। বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে ১০টি,বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে ২৬টি, গত বছর ছিল ৩০টি। খাতামধুপুর ইউনিয়নে ৬টি, গত বছর ছিল ৯টি। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পূজামন্ডপে কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
সৈয়দপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, এখন মণ্ডপগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। আমরা কোন ধরনের আশঙ্কা মনে করছি না। তারা জানান, কারিগররা পরম স্নেহে গড়ে তুলছেন কাদামাটির অবয়ব। একে একে সেখানে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার চেহারা। সঙ্গে আছে অসুর,সিংহ,মহিষ, গণেশ,সরস্বতী,কার্তিক ও লক্ষ্মীর প্রতিমাও। উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরিতে মাটির সব কাজ এরইমধ্যে শেষ করেছেন কারিগররা। কোথাও কোথাও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে রং করার। এঁটেল মাটি,বাঁশ,কাঠ,খড়, পাটের আঁশ ও রং দিয়ে প্রতিমার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। প্রতিমাগুলোকে পূজামণ্ডপে তোলার উপযোগী করতে দিনরাত কাজ করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টির কারণে অনেক সময় কাজ করতে কষ্ট হলেও বসে নেই তারা। কাজের পুরো সময়ে প্রতিমা যেন বৃষ্টিতে না ভেজে সেদিকে রাখতে হয়েছে বিশেষ নজর। তারা আরও জানান,বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পারিশ্রমিক একটু বেশি। প্রতিমাভেদে ধরা হয়েছে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকারও বেশি মজুরি।
সৈয়দপুর বোতলাগাড়ী ঠাকুরপাড়া পূজা মন্ডপ কমিটির সভাপতি শ্রী দেবাশীষ চন্দ্র মজুমদার জানান, তাদের পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে মাটির কাজ সব শেষ। এখন শুরু হবে রঙের কাজ। এরপরই জরা হবে প্রতিমার পোশাক আর গহনার কাজ। তিনি আরও বলেন, আশ্বিন মাসের ২৪ তারিখ থেকে শুরু হবে পূজা। আশা করছি এ সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
কামারপুকুর কালীবাড়ী পুজা মন্ডপ সমিতির সভাপতি শ্রী বাবুল চন্দ্র রায় জানান,পুরোদমে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সরকারি নির্দেশনা মেনে পূজা পালনের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের শীবেরহাট দেবোত্তর পুজা মন্ডপ সমিতির সভাপতি স্বপন চন্দ্র রায় জানান, মাটির কাজ শেষের দিকে। এখন রংয়ের কাজ করা হবে।
খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিসা বাবন পাড়া দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী লেবু রায় জানান, কোন ধরনের ঝুকি বা অন্য কোন আশঙ্কা নেই। আমরা সুন্দরভাবে পূজার কাজ করছি।
সনাতন ধর্মের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে মর্ত্যলোকে। মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসব। তবে এবারে দেবীদূর্গা কিসে করে আসবে তা পরিস্কার করতে পারেননি তিনি।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বালাপাড়া বাসন্তী পূজা মন্ডপ কমিটির সভাপতি শ্রী নন্দলাল হাজরা জানান, কোন আশঙ্কা মনে করছি না। পূজার যাবতীয় মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা পাইনি। তবে আশা করা যায় সহযোগিতা পাব।
পৌর এলাকার রসুলপুর সুইপার কলোনি পূজা মন্ডপ কমিটির সভাপতি শ্রী বিজলী রাম বলেন, প্রতি বছর সরকারি সহযোগিতা পেয়ে থাকি। এবছর এখন পর্যন্ত কোন পাইনি। তবে অনেকে বলছেন সরকারি সহযোগিতা আসবে।
সৈয়দপুর কয়ামিস্ত্রী পাড়া শিব মন্দির পুজা কমিটি সভাপতি কার্তিক চন্দ্র রায় জানান, মাটির কাজ শেষ করা হয়েছে। সাদা রং করা হয়েছে। এরপর নানান রঙে সাজানো হবে দেবীদুর্গাকে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর -ই – আলম সিদ্দিকী জানান, এবার সৈয়দপুর উপজেলায় ৭৩টি পুজামন্ডপ হয়েছে। পূজায় যাতে কোন ধরনের বিশৃংখলা না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. ফইম উদ্দিন জানান বলেন, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সনাতন ধর্মের এ প্রধান উৎসবে যাতে কোন ধরনের বিশৃংখলা না হয় সে জন্য অন্যান্য বাহিনীর সাথে পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবে।