পঞ্চগড়ে তক্ষকসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য আটক

- আপডেট সময় : ০২:২৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩ ৬৫ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে বিপন্ন প্রজাতির তক্ষকসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) গভীর রাতে বোদা পৌরসভার জমাদারপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তক্ষকসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
আটকরা হলেন- পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া কাজীপাড়া এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা গোলাপ (৫৩) ও আটোয়ারী উপজেলার ভুজারিপাড়া এলাকার মনিন্দ্রনাথের ছেলে পিজুস সরকার (৪২)।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাত বোদা পৌরসভার জমাদারপাড়া এলাকায় গোলাম মোস্তফা ও পিজুস সরকার তক্ষকটি নিয়ে অবস্থান করছিল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোদা থানার উপপরিদর্শক মনজুরুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করে। এ সময় তাকে কাছে একটি শপিং ব্যাগে ওই তক্ষকটি উদ্ধার করেন তারা। তক্ষকটি ভারতে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল মিল্টন হোসেনের উপস্থিতিতে সামাজিক বন বিভাগ পঞ্চগড় কার্যালয় চত্বরের বাঁশ বাগানে তক্ষকটি অবমুক্ত করা হয়। এ সময় সামাজিক বন বিভাগ পঞ্চগড়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা মধুসুধন বর্মনসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মধুসুধন বর্মন বলেন, তক্ষকটি লম্বায় ১৩ ইঞ্চি। এটি টিকটিকি গোত্রের একটি প্রাণী। প্রতারক চক্র এই প্রাণীটিকে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে মানুষকে প্রতারিত করে।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন তক্ষক ধরে এবং দেশে-বিদেশে বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যেমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতো। আমরা খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে চক্রের দুজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। পরে বুধবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া তক্ষকটি পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাঁশ বাগানে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে জেনেছি।
এদিকে তক্ষক সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা বলেন, তক্ষক (Gecko) গিরগিটি প্রজাতির র্নিবিষ নিরীহ বন্যপ্রাণী। সাধারণত পুরনো বাড়ির ইটের দেয়াল, ফাঁক-ফোকড় ও বয়স্ক গাছে এরা বাস করে। কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপের বাচ্চা খায়। আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল তালিকা অনুযায়ী এটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী।
তিনি আরও বলেন, তক্ষকের দাম ও তক্ষক দিয়ে তৈরি ওষুধ নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর গুজবে বিশ্বাস করে এক শ্রেণির লোকেরা রাতারাতি ধনী হবার স্বপ্নে তক্ষক শিকারে নেমেছে। মূলত ব্যাপক নিধনই তক্ষক বিলুপ্তির প্রধান কারণ। এছাড়া তক্ষক দ্বারা তৈরি বিভিন্ন ওষুধের উপকারিতা নিয়ে যা শোনা যায়, বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো ভিত্তি নেই। তারপরও এই গুজবটির কারণেই প্রাণীটি হারিয়ে যেতে বসেছে।