সৈয়দপুর ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরপার দাফন সেবায় সপে দেয়া মানুষ কাইয়ুম

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ০২:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫ ৮১ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির: আগ্রাসী দেশের হামলায় চারদিকে যখন মৃত্যুর মিছিলে অস্থির। কখনও এক মুঠো মাটি জুটে না অভাগাদের। এসব দেশে লাশ সৎকারের চেয়ে জীবন রক্ষাই কঠিন। আমাদের দেশে মরণাস্ত্রের থাবা নেই। তাই পরপারের দাফন সেবা নির্বিঘ্ন হয়। পরপারের এই দাফন সেবায় সপে দিয়েছেন একজন মানবিক ধর্মভীরু মোঃ কাইয়ুম হোসেন। নীলফামারীর নিভৃত পল্লী কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেরভেরী গ্রামে গড়ে তুলেছেন তাঁর মানবিক দাফন সেবা কার্যক্রম। সকল অসহায় মানুষের দাফন কার্যক্রমের জন্য ৬৫ শতক জমি দান করেছেন দাফন সেবার জন্য। সাথে গড়ে তুলেছেন দর্শণিয় একটি মসজিদ।

নীলফামারীর টেংগনমারী-বড়ভিটা সড়কে ভেরভেরী গ্রামে প্রায় ৯০ শতক জমিতে গড়ে উঠেছে ধাইজান বায়তুল হেরা জামে মসজিদ ও দাফন সেবার জন্য কবরস্থান । কোন মুসলিম পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান না থাকলে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফনের একমাত্র ঠিকানা হলো তার ‘পরপারে দাফন সেবা’র জন্য কবরস্থান। জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী থেকে পুবদিকে পৌনে এক কিলোমিটার দুরে এটি অবস্থিত। দাফনের কাপড় সহ সব কিছুই বহন করেন সাদা মনের মানুষ কাউয়ুম হোসেন। ০১৮৭৮-৫৯০৭৯০ এই নম্বরে ভিডিও কলে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক দাফন সেবার সকল কার্যক্রম করেন তিনি। ৬৫ শতক জমি কবরস্থানের জন্য দান করেছেন। সাথেই রয়েছে, ২ হাজার ৬ শত বর্গফুট বিশিষ্ঠ একটি আধুনিক দর্শণিয় মসজিদ। ৫ তলার ভিত্তি দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ করেছেন। এই কাজে হিতাকাঙ্খী ও আত্বীয়-স্বজন পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে কাইয়ুম জানান। এলাকার মানুষ এই মসজিদটির মুসল্লি।
মসসজিদের পাশে কাইয়ুম গড়ে তুলেছেন, কল্পিত ‘নানুবাড়ী’ নামে একটি মাথা গোজার ঠাঁই। ঢাকার শনির আখরায় পৌত্রিকসূত্রে বসবাস। কাইয়ুম বলেন, গ্রামে কোন বাড়ী না থাকায় সন্তানদের আবদারে গ্রামের ঠিকানা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এ এলাকা। বাসার পাশেই রিক্সা গ্যারেজে যাতায়াত করা নীলফামারী এলাকার রিক্সাচালকদের সাথে পরিচয় হয় কাইয়ুমের। সখ্যতাও গড়ে উঠে। তাদের মাধ্যমেই এই এলাকায় গ্রামের বাড়ী করার জন্য প্রায় ৯০ শতক জমি কিনে ফেলেন। সখ জাগে গ্রামের বাড়ীতে ঈদ করা। দারিদ্রপিড়িত জনপদের দুর্দশা দেখে আগে কবরস্থান ও মসজিদ গড়ে তোলেন। পরে ‘নানুবাড়ী’ নামে এই স্থাপনাটি করেন। ঢাকায় ঠিকাদারী ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করা কাইয়ুম ইট-পাথরের শহরে যখন হাঁফিয়ে উঠেন। তখন স্বস্তির খোঁজে স্ত্রী রোকেয়া হোসেন সহ ওই কল্পিত ‘নানুবাড়ীতে’ উঠেন। এই এলাকার দিনমজুর হামিদুল বলেন, প্রতি ঈদে কাইয়ুম সাহেবেরা ওই বাড়ীতে আসার সময় পাড়ার খেটে খাওয়া নারী,পুরুষ ও তাদের সন্তানদের জন্য ঈদের পোষাক নিয়ে আসেন। পুটিমারী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহেদুল ইসলাম বলেন, কাইয়ুম হোসেন একজন মানবিক লোক। এলাকার অসহায় মানুষের দাফন সেবায় সপে দিয়েছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে’র তিনি একজন নিয়মিত ডোনার। সব ভাল কাজেই তাঁকে পাওয়া যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


পরপার দাফন সেবায় সপে দেয়া মানুষ কাইয়ুম

আপডেট সময় : ০২:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

ফজল কাদির: আগ্রাসী দেশের হামলায় চারদিকে যখন মৃত্যুর মিছিলে অস্থির। কখনও এক মুঠো মাটি জুটে না অভাগাদের। এসব দেশে লাশ সৎকারের চেয়ে জীবন রক্ষাই কঠিন। আমাদের দেশে মরণাস্ত্রের থাবা নেই। তাই পরপারের দাফন সেবা নির্বিঘ্ন হয়। পরপারের এই দাফন সেবায় সপে দিয়েছেন একজন মানবিক ধর্মভীরু মোঃ কাইয়ুম হোসেন। নীলফামারীর নিভৃত পল্লী কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেরভেরী গ্রামে গড়ে তুলেছেন তাঁর মানবিক দাফন সেবা কার্যক্রম। সকল অসহায় মানুষের দাফন কার্যক্রমের জন্য ৬৫ শতক জমি দান করেছেন দাফন সেবার জন্য। সাথে গড়ে তুলেছেন দর্শণিয় একটি মসজিদ।

নীলফামারীর টেংগনমারী-বড়ভিটা সড়কে ভেরভেরী গ্রামে প্রায় ৯০ শতক জমিতে গড়ে উঠেছে ধাইজান বায়তুল হেরা জামে মসজিদ ও দাফন সেবার জন্য কবরস্থান । কোন মুসলিম পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান না থাকলে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফনের একমাত্র ঠিকানা হলো তার ‘পরপারে দাফন সেবা’র জন্য কবরস্থান। জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী থেকে পুবদিকে পৌনে এক কিলোমিটার দুরে এটি অবস্থিত। দাফনের কাপড় সহ সব কিছুই বহন করেন সাদা মনের মানুষ কাউয়ুম হোসেন। ০১৮৭৮-৫৯০৭৯০ এই নম্বরে ভিডিও কলে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক দাফন সেবার সকল কার্যক্রম করেন তিনি। ৬৫ শতক জমি কবরস্থানের জন্য দান করেছেন। সাথেই রয়েছে, ২ হাজার ৬ শত বর্গফুট বিশিষ্ঠ একটি আধুনিক দর্শণিয় মসজিদ। ৫ তলার ভিত্তি দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ করেছেন। এই কাজে হিতাকাঙ্খী ও আত্বীয়-স্বজন পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে কাইয়ুম জানান। এলাকার মানুষ এই মসজিদটির মুসল্লি।
মসসজিদের পাশে কাইয়ুম গড়ে তুলেছেন, কল্পিত ‘নানুবাড়ী’ নামে একটি মাথা গোজার ঠাঁই। ঢাকার শনির আখরায় পৌত্রিকসূত্রে বসবাস। কাইয়ুম বলেন, গ্রামে কোন বাড়ী না থাকায় সন্তানদের আবদারে গ্রামের ঠিকানা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এ এলাকা। বাসার পাশেই রিক্সা গ্যারেজে যাতায়াত করা নীলফামারী এলাকার রিক্সাচালকদের সাথে পরিচয় হয় কাইয়ুমের। সখ্যতাও গড়ে উঠে। তাদের মাধ্যমেই এই এলাকায় গ্রামের বাড়ী করার জন্য প্রায় ৯০ শতক জমি কিনে ফেলেন। সখ জাগে গ্রামের বাড়ীতে ঈদ করা। দারিদ্রপিড়িত জনপদের দুর্দশা দেখে আগে কবরস্থান ও মসজিদ গড়ে তোলেন। পরে ‘নানুবাড়ী’ নামে এই স্থাপনাটি করেন। ঢাকায় ঠিকাদারী ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করা কাইয়ুম ইট-পাথরের শহরে যখন হাঁফিয়ে উঠেন। তখন স্বস্তির খোঁজে স্ত্রী রোকেয়া হোসেন সহ ওই কল্পিত ‘নানুবাড়ীতে’ উঠেন। এই এলাকার দিনমজুর হামিদুল বলেন, প্রতি ঈদে কাইয়ুম সাহেবেরা ওই বাড়ীতে আসার সময় পাড়ার খেটে খাওয়া নারী,পুরুষ ও তাদের সন্তানদের জন্য ঈদের পোষাক নিয়ে আসেন। পুটিমারী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহেদুল ইসলাম বলেন, কাইয়ুম হোসেন একজন মানবিক লোক। এলাকার অসহায় মানুষের দাফন সেবায় সপে দিয়েছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ‘নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে’র তিনি একজন নিয়মিত ডোনার। সব ভাল কাজেই তাঁকে পাওয়া যায়।