পুরনো বলয়ে আওয়ামী লীগ, বাদ পড়লেন শফিক

- আপডেট সময় : ০৬:০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ৪৮ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্টঃ উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে টানা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হলেন তিনি।
১৯৮১ সালে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে টানা দলটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল ২২তম কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে পুনরায় সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তৃতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদেরই একমাত্র ব্যক্তি যিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করলেন।
শেখ হাসিনা আবারও দায়িত্ব আবারও সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন এটা নিশ্চিত খবর থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে গুঞ্জনও ছিল। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জন উড়িয়ে ওবায়দুল কাদেরের ওপরই ভরসা রাখল আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে আট বিভাগের পক্ষ থেকে আট জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন। দলের কোষাধ্যক্ষ এ এইচ এন আশিকুর রহমান চৌধুরী অর্থবিল উত্থাপন করেন। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী উপস্থাপন করেন ঘোষণাপত্র কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং গঠনতন্ত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক।
দলীয় সম্মেলন হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি না করলে সেই কমিটি বিলুপ্ত বলে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হয়। আর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয় মহিলা শ্রমিক লীগকে। কাউন্সিলরদের কণ্ঠ ভোটে এগুলো পাস করানো হয়।
এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৫টায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তারপর দল থেকে বিদায় চান শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি বলেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। নতুন আসতে হবে। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন- এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
এ বক্তব্যের সময় উপস্থিত কাউন্সিলররা ‘না, না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এতে তাঁর বক্তব্য শেষ করতেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। এরপর মঞ্চে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কমিশনার ড. মসিউর রহমান ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
উন্মুক্ত মঞ্চে নির্বাচন কমিশনাররা সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব চাইলে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফারুক আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এ পদে বিকল্প কোনো নাম আছে কি না? নির্বাচন কমিশন জানতে চাইলে উপস্থিত কাউন্সিলররা না না করে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর সভাপতি পদে শেখ হাসিনার প্রার্থিতার প্রস্তাব সমর্থন করেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তারপর নাম প্রস্তাব চাওয়া হয় সাধারণ সম্পাদক পদে নাম। নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। তাতে সমর্থন জানান ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। এ পদেও আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার।
১০ম বারের মতো পুনর্নির্বাচিত সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক এক সাথে মঞ্চে আসেন। এ সময় শেখ হাসিনা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
ভাষনে শেখ হাসিনা বলেন, কী বলব, আপনারা ১৯৮১ সালে এই পদে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আজ আবারও আপনারা দায়িত্ব দিলেন। এরপর দলটির নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আহ্বান জানান। সভাপতির ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকমন্ডলী সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।কোন পরিবর্তন ছাড়াই দলের ৮১ সদস্যের মধ্যে ৪৮ জনের নাম ঘোষণা করেন তিনি। পূর্বের কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্যের তিনজন এবং সম্পাদকমন্ডলীর দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। সদস্য থেকে প্রেসিডিয়ামে পদোন্নতি পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। পূর্বের কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক থেকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হয়েছেন আমিনুল ইসলাম আমিন।
এদিকে নতুন কমিটি থেকে ছিটকে গেলেন পূর্বের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। আটজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে স্বপদে বহাল রয়েছেন সাত জন। শুধু সাখাওয়াত হোসেন শফিক এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পূর্বের কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
সব মিলিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৫ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ০৪ জন, কোষাধ্যক্ষ ০১ জন, জন বিভাগীয় সম্পাদক ১৭ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ০৮ ও উপ-সম্পাদক পদে ০১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন মুখ ছাড়াই ৪৮ জন পুরনো নেতাদের দিয়েই আগামী তিন বছর পরিচালিত হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে বাদ পড়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, রমেশ চন্দ্র সেন ও অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য থেকে বাদ পড়েছেন শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদ। বাদ পড়া এই পাঁচজনেরই জায়গা হয়েছে উপদেষ্টা হিসাবে।
দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে ঠাঁই হয়েছে বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. আবদুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম ও সিমিন হোসেন রিমি স্বপদে বহাল আছেন।
১৭ সদস্যবিশিষ্ট প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে ১৫ জনের নাম শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেও ফাঁকা রয়েছে দুটি পদ। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে যুক্ত করা হয়েছে প্রেসিডিয়ামে।
কার্যনির্বাহী কমিটির চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণার সময় শেখ হাসিনা বলেন, আগের চারজনই বহাল থাকছেন। ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডা দীপু মনি। তারাই থাকবেন। এইচ এন আশিকুর রহমানও কোষাধ্যক্ষ পদে বহাল রয়েছেন।
১৯টি বিভাগীয় সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে পূর্বের কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা স্বপদে বহাল রয়েছেন।
পূর্বের কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জায়গা পেয়েছেন সম্পাদকমন্ডলীর ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে। শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। পূর্বের কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানও স্বপদে বহাল রয়েছেন। তবে ফাঁকা রয়েছে উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। সব মিলিয়ে বর্তমান কমিটির যে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে তা পরবর্তীতে মিটিং করে দেওয়া হবে বলে জানান দলীয় সভানেত্রী।
পূর্বের উপদেষ্টা পরিষদ অপরিবর্তিত রেখে নতুন করে জায়গা পেয়েছেন কার্যনির্বাহী কমিটির রমেশ চন্দ্র সেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, হারুনুর রশিদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ।
সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মোঃ রাশিদুল আলম এবং ডাঃ দীপু মনি। পূর্বের সংসদীয় বোর্ডের পাঁচজন সদস্য মৃত্যবরণ করায় পরে সেগুলো পূরণ করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডে প্রধান হিসেবে সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, ডাঃ মোঃ আবদুর রাজ্জাক, লেঃ কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মোঃ রাশিদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোঃ আবদুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ ও ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
জাতীয় কমিটির নাম ঘোষণার সময় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানান, জেলা থেকে যেসব নাম পাঠানো হয়েছে, সেগুলো বহাল রেখে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মির্জা এম এ জলিল, আকবর আলী মর্জি, ড. আনিসুল হক, জাহিদ মালিক স্বপন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, শাহজাহান কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস, চন্দ্রীজগল পাল, শ্রী রমেশ চন্দ্র, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হারুনুর রশিদ ও হাবিবুর রহমান সিরাজ কে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।