ফজল কাদির: দীর্ঘ ১৩ বছরেও কোন পুঁজোয় স্বামীর কাছ থেকে একটা সিঁদুরের কৌটাও ভাগ্যে জোটেনি সমিতা রানীর (২৯)। মাত্র কয়েক মাসের সংসারে তার উপর নেমে আসে স্বামীর উপেক্ষা । পারিবারিকভাবে তাকে মানসিক যন্ত্রণা এমনকি শারীরিক লাঞ্চনা শুরু করা হয়। স্বামীর সংসার থেকে বিতারিত হয়ে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর সংসারের আশায় বুক বেঁধেই রয়েছেন তিনি এখনও।
এই পুঁজোতেও স্বামীর অন্তত একটি সিঁদুরের কৌটার অপেক্ষা করছেন সমিতা। তিনি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বামনা-বামনী হরিসভাপাড়া গ্রামের শ্রী রতন চন্দ্র রায়ের স্ত্রী। ১৩ বছর আগে হিন্দু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সমিতার বিয়ে হলেও, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই স্বামীর সংসার থেকে বিতারিত হয়ে বয়স্ক বাবার বাড়ীতে দিনযাপন করছেন সমিতা।
জানতে চাইলে, ভুক্তভোগী সমিতা রানী বলেন, জেলার জলঢাকা উপজেলার বামনা-বামনী হরিসভাপাড়া এলাকার অতুল চন্দ্র রায়ের ছেলে রতনের সাথে হিন্দুধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বাবা গরীব, বিয়ের সময় রতনকে যথাসাধ্য উপঢৌকন দিয়েছে। কয়েকটা মাস যেতে না যেতেই স্বামী ও তার পরিবারের অন্যান্যরা যৌতুকের কারণে আমাকে প্রায় সময় অমানসিক নির্যাতন করতো। আমি স্বামীর সংসার করার জন্য সকল অন্যায়-অত্যাচার নীরবে সহ্য করতাম। এক পর্যায়ে যৌতুকের কারণে আমাকে মারধর করে আমার বাড়ীর পাশে ফেলে চলে যায় তারা। আমার বয়স্ক বাবা-মা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করান। পরে আমি আবারও আমার স্বামীর বাড়ীতে গেলে, তারা আমাকে তাদের বাড়ী থেকে বের করে দেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে স্বামীর অপেক্ষায় বয়স্ক বাবার বাড়ীতে অসহায় জীবন যাপন করছি, এই ১৩ বছরেও সে আমার কোন খোঁজ নেয়নি। ১৩ বছরের কোন পুঁজোয় একটা সিঁদুরের কৌটাও এনে দেয়নি, কিন্তু সে (রতন) নতুন বিয়ে করে বউকে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। হিন্দু ধর্মে নারীদের বিয়ে এক বারেই হয়।"
রতনের সাথে নিজের হাতেই সমিতার বিয়ে দিয়েছেন এমন দাবী করে খুটামারা ইউনিয়নের সাবেক ইউ,পি সদস্য দেলোয়ার রহমান বলেন, “বিয়ের সময় সমিতার স্বামী রতনের বাবাকে দেড় লক্ষ টাকা উপঢৌকন দিয়েছিল। পরবর্তীতে যৌতুকের দাবীতে সমিতাকে বেধরক মারপিট করে।
সমিতার বাবা টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় সমিতাকে তারা (রতন ও তার পরিবার) তাদের বাড়ী থেকে বের করে দেয়। সমিতা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তার বয়স্ক বাবার টানাপোড়ানের সংসারে রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে অতুল চন্দ্র রায়ের ছেলে রতনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বাবার বাড়ীতে অসহায় পড়ে রয়েছেন সমিতা। তিনি দিন গুনছেন, কবে ফিরতে পারবেন স্বামীর সংসাওে ? যদি পুঁজোতে মন গলে যায় স্বামীর। বুক ভরা আশা নিয়ে এখনও একটা সিঁদুরের অপেক্ষায় আছে সমিতা।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবুল কালাম আজাদ
অফিস: হোল্ডিং নং- ৪২, মাহাতাব লেন, নিয়ামতপুর বৃত্তিপাড়া, সৈয়দপুর-৫৩১০, নীলফামারী।