সৈয়দপুর ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১২ জন শিক্ষকের ২ শিক্ষার্থী সবাই ফেল, বইছে সমালোচনার ঝড়

মো. মারুফ হোসেন লিয়ন
  • আপডেট সময় : ০১:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ মারুফ হোসেন লিয়ন: নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও অকৃতকার্য হয়েছে সব পরীক্ষার্থী। এই বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এ নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুর ২ টায় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এরপরই জানা যায়, পুরো উপজেলায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শূন্য পাসের তালিকায় রয়েছে, তার মধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামও রয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২ জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও এবার মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু কেউই উত্তীর্ণ হতে না পারায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলেও এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় সরকারি করার জন্য ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন পায়। যা প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধানসহ ১২ জন শিক্ষক এবং তিন জন কর্মচারী রয়েছেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে এটি একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানাতে পারেনি শিক্ষা অফিস।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে ছাত্রীর সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় দুজন।

অকৃতকার্য হওয়া দুই ছাত্রী জানায়, স্যাররা বিদ্যালয়ে আসেন না। বিদ্যালয়ে বসার চেয়ার-টেবিল নেই। পরীক্ষার আগে ফরম পূরণ করে আমাদের জানানো হয়, এসএসসি পরীক্ষা দিতে হবে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আসলে পরীক্ষা দেওয়ার মতো আমাদের কোনও প্রস্তুতি ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এভাবে কেউ পাস না করতে পারায় আমাদের এলাকার মান-সম্মান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন কি না, সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসে ২৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে দুজন এসএসসিতে অংশ নিলেও পাস করেনি।

এ বিষয়ে এর প্রতিবেদক একাধিকবার প্রধান শিক্ষক আকতার হাবিব সরকারের মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কেন এমন ফলাফল হলো, শিক্ষার্থী এত কম কেন, এসব বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি ননএমপিওভুক্ত হওয়ায় বেহাল দশায় ফেলেছে। এজন্য দায়ী পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে নামকরণ করে দায় সেরেছে। মোটেও কাজটি ঠিক করেনি। এক ধরনের অপরাধ করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


১২ জন শিক্ষকের ২ শিক্ষার্থী সবাই ফেল, বইছে সমালোচনার ঝড়

আপডেট সময় : ০১:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

মোঃ মারুফ হোসেন লিয়ন: নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও অকৃতকার্য হয়েছে সব পরীক্ষার্থী। এই বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এ নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুর ২ টায় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এরপরই জানা যায়, পুরো উপজেলায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শূন্য পাসের তালিকায় রয়েছে, তার মধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামও রয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২ জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও এবার মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু কেউই উত্তীর্ণ হতে না পারায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলেও এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় সরকারি করার জন্য ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন পায়। যা প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধানসহ ১২ জন শিক্ষক এবং তিন জন কর্মচারী রয়েছেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে এটি একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানাতে পারেনি শিক্ষা অফিস।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে ছাত্রীর সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় দুজন।

অকৃতকার্য হওয়া দুই ছাত্রী জানায়, স্যাররা বিদ্যালয়ে আসেন না। বিদ্যালয়ে বসার চেয়ার-টেবিল নেই। পরীক্ষার আগে ফরম পূরণ করে আমাদের জানানো হয়, এসএসসি পরীক্ষা দিতে হবে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আসলে পরীক্ষা দেওয়ার মতো আমাদের কোনও প্রস্তুতি ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এভাবে কেউ পাস না করতে পারায় আমাদের এলাকার মান-সম্মান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন কি না, সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসে ২৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে দুজন এসএসসিতে অংশ নিলেও পাস করেনি।

এ বিষয়ে এর প্রতিবেদক একাধিকবার প্রধান শিক্ষক আকতার হাবিব সরকারের মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কেন এমন ফলাফল হলো, শিক্ষার্থী এত কম কেন, এসব বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি ননএমপিওভুক্ত হওয়ায় বেহাল দশায় ফেলেছে। এজন্য দায়ী পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে নামকরণ করে দায় সেরেছে। মোটেও কাজটি ঠিক করেনি। এক ধরনের অপরাধ করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবো।