সৈয়দপুর ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ার ইছামতি নদীর তীরে বউমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আবু তাহের, বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়া জেলার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল শতাব্দি প্রাচীন বউমেলা। বুধবার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ৭০তম এই বউমেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। বউমেলায় নারীরাই কেনাকাটা করে। পুরষরা এই মেলায় প্রবেশ করতে পারে না।

ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটিতে পুরুষদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। মেলার প্রধান ফটকে মহিলা স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়োজিত থাকে। এ কারনে মহিলারা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারে। তাই যুগ যুগ ধরে এই মেলাটির নামকরণ হয়েছে বউমেলা নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

ইছামতি নদীর তীরে প্রতীমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানিরা এসে পণ্যের পসরা সাজায়। এসব দোকানগুলোকে ঘিরে মেলা বসতে শুরু করে। প্রতীমা বিসর্জনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসে মেলায়। দুপুর গড়াতেই মেলায় সমাগম ঘটতে থাকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের। যুগ যুগ ধরে ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে ৫ থেকে ৭টি মন্দিরের প্রতীমা একসঙ্গে বিসর্জন দিয়ে থাকে। বিসর্জন উপলক্ষে গড়ে উঠা মেলায় গ্রামীণ সড়ক জুড়ে মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাজে বঁধুর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে সিথির সিঁদুর। ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষা গ্রামটি যেন হঠাৎ করেই জেগে ওঠে কোন এক অজানা পরশে। মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষণ।

আজ বুধবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৭০তম এই বউমেলার সমাপ্তি ঘটে। মেলায় আগত ক্রেতা মিনতি রানী জানান, শেরপুর উপজেলা সদর থেকে এসেছেন এই বউমেলায়। মেলার ভিতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছেন এবং দামও কিছুটা কম ছিল।

মেলার দোকানি মাসুদা বেগম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বগুড়া থেকে ধুনটের এই বউমেলায় এসেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর বউমেলায় ক্রেতাদের অনেক ভীড় ছিল। তাই বেচা-বিক্রিও ভাল হয়েছে।

সরকারপাড়া বউমেলা কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দেব জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঐতিহ্যবাহী বউমেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। তাই এই মেলা ও পূজা উদযাপনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিয়েজিত ছিল।

ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই বউমেলা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

ধুনট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উপজেলার পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নে ২৯টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


বগুড়ার ইছামতি নদীর তীরে বউমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়

আপডেট সময় : ০৫:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২

আবু তাহের, বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়া জেলার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল শতাব্দি প্রাচীন বউমেলা। বুধবার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ৭০তম এই বউমেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। বউমেলায় নারীরাই কেনাকাটা করে। পুরষরা এই মেলায় প্রবেশ করতে পারে না।

ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটিতে পুরুষদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। মেলার প্রধান ফটকে মহিলা স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়োজিত থাকে। এ কারনে মহিলারা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারে। তাই যুগ যুগ ধরে এই মেলাটির নামকরণ হয়েছে বউমেলা নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

ইছামতি নদীর তীরে প্রতীমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানিরা এসে পণ্যের পসরা সাজায়। এসব দোকানগুলোকে ঘিরে মেলা বসতে শুরু করে। প্রতীমা বিসর্জনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসে মেলায়। দুপুর গড়াতেই মেলায় সমাগম ঘটতে থাকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের। যুগ যুগ ধরে ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে ৫ থেকে ৭টি মন্দিরের প্রতীমা একসঙ্গে বিসর্জন দিয়ে থাকে। বিসর্জন উপলক্ষে গড়ে উঠা মেলায় গ্রামীণ সড়ক জুড়ে মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাজে বঁধুর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে সিথির সিঁদুর। ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষা গ্রামটি যেন হঠাৎ করেই জেগে ওঠে কোন এক অজানা পরশে। মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষণ।

আজ বুধবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৭০তম এই বউমেলার সমাপ্তি ঘটে। মেলায় আগত ক্রেতা মিনতি রানী জানান, শেরপুর উপজেলা সদর থেকে এসেছেন এই বউমেলায়। মেলার ভিতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছেন এবং দামও কিছুটা কম ছিল।

মেলার দোকানি মাসুদা বেগম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বগুড়া থেকে ধুনটের এই বউমেলায় এসেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর বউমেলায় ক্রেতাদের অনেক ভীড় ছিল। তাই বেচা-বিক্রিও ভাল হয়েছে।

সরকারপাড়া বউমেলা কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দেব জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঐতিহ্যবাহী বউমেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। তাই এই মেলা ও পূজা উদযাপনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিয়েজিত ছিল।

ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই বউমেলা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

ধুনট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উপজেলার পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নে ২৯টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।