সৈয়দপুর ১১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একনা ঘর আছিলো সেটাও আওদি উড়ি নিয়া গেইছে, এখন হামরা কোনটে থাকি ?

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ১০:০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির: নীলফামারীতে রোববার সকালে টর্ণেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ৬৫ বছরের বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন আহাজারী করে বলছিলেন, একনা ঘর আছিলো সেটাও আওদি উড়ি নিয়া গেইছে, এখন হামরা কোনটে থাকি।

সোমবার দুপুরে দুর্গত এলাকার বাসিন্দা নাজিমউদ্দিনকে ঝড়ে তছনছ হওয়া ফাঁকা ঘড়ের মেঝেতে বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাঠিতে ভর করে জীবণের বহু ঝড় সামলানো মানুষটি প্রাকৃতিক ঝড়ের কাছে হার মেনে বির বির করে ওই কথাগুলো বলছিলেন।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে রোববার সকালে আচমকা টর্ণেডো হানা দেয়। এতে ৫ শত ৫১ টি পরিবারের অসংখ্য ঘড়বাড়ী বিধ্বস্থ হয়। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে অভাগা নাজিম উদ্দিনও একজন। তিনি ওই ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা। ৬ শতক জমির উপর তার পুরোনো টীনের জীর্ণঘড়। মাত্র ১৫ হাত বিশিষ্ট ওই ঘরটিতে বাস করত স্ত্রী সাফিয়া বেগম ও ৩ সন্তান। সেখানেই ঠাসাঠাসি করে থাকতেন সবাই। বসতভিটাটি একমাত্র সম্বল। নাজিম উদ্দিন ২ বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন। বড় ছেলে সফিকুল ইসলাম (৪৫) পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। তিনি কৃষিজীবি শ্রমিক। নিজের চাষাবাদ নেই। তার দুই ছোট ভাই মেধাবী। তাই ক্লান্তিহীন শ্রম দিয়ে তাদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে যাচ্ছে সফিকুল। মেজ ভাই মোঃ সুজন মিয়া হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যকাউন্টিং বিভাগে পড়ছেন। ছোট ভাই রণচন্ডি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভাল ফলাফলের জন্য দিন গুনছেন।

প্রতিকুল অবস্থা সত্বেও পরিবারের বিশাল দায় নিয়ে বড়ছেলে সফিকুলের দুর্নিবার স্বপ্ন দেখার মনোবল দেখে বাবা নাজিম উদ্দিনের বুক ভরে উঠত। জীবনে অনেক ঝড়ঝান্ডা পুরুনো পক্ষাঘাত মানুষটি ভবিষ্যতে বিজয় নিশান উড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির নির্মম ঝড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। আর হয়ত বিজয় নিশান উড়বে না তার পরিবারে এমনই হতাশা নেমে এসেছে।

পক্ষাঘাতের কারণে ডান হাত ও ডান পা অবশ, নিশ্চল নাজিম উদ্দিনের। চেয়ারে বসেই প্রাকৃতিক কাজ সাড়েন। অন্যের সাহায্য ছাড়া এক কদমও চলতে পারেন না। এই অসুস্থ্য মানুষটির পক্ষে খোলা আকাশের নীচে থাকা আর এক কষ্টের। তাই এলাকার মানবিক লোকজন ও ছোটভাইয়ের জামাতা শাহজাহান মিয়া (৪০) ৪টি পুরোনো টিন দিয়ে একটি চালা করে দিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার থেকে একটি কম্বল ও কিছু খাদ্য সামগ্রী এবং বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


একনা ঘর আছিলো সেটাও আওদি উড়ি নিয়া গেইছে, এখন হামরা কোনটে থাকি ?

আপডেট সময় : ১০:০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ফজল কাদির: নীলফামারীতে রোববার সকালে টর্ণেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ৬৫ বছরের বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন আহাজারী করে বলছিলেন, একনা ঘর আছিলো সেটাও আওদি উড়ি নিয়া গেইছে, এখন হামরা কোনটে থাকি।

সোমবার দুপুরে দুর্গত এলাকার বাসিন্দা নাজিমউদ্দিনকে ঝড়ে তছনছ হওয়া ফাঁকা ঘড়ের মেঝেতে বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাঠিতে ভর করে জীবণের বহু ঝড় সামলানো মানুষটি প্রাকৃতিক ঝড়ের কাছে হার মেনে বির বির করে ওই কথাগুলো বলছিলেন।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে রোববার সকালে আচমকা টর্ণেডো হানা দেয়। এতে ৫ শত ৫১ টি পরিবারের অসংখ্য ঘড়বাড়ী বিধ্বস্থ হয়। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে অভাগা নাজিম উদ্দিনও একজন। তিনি ওই ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা। ৬ শতক জমির উপর তার পুরোনো টীনের জীর্ণঘড়। মাত্র ১৫ হাত বিশিষ্ট ওই ঘরটিতে বাস করত স্ত্রী সাফিয়া বেগম ও ৩ সন্তান। সেখানেই ঠাসাঠাসি করে থাকতেন সবাই। বসতভিটাটি একমাত্র সম্বল। নাজিম উদ্দিন ২ বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন। বড় ছেলে সফিকুল ইসলাম (৪৫) পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। তিনি কৃষিজীবি শ্রমিক। নিজের চাষাবাদ নেই। তার দুই ছোট ভাই মেধাবী। তাই ক্লান্তিহীন শ্রম দিয়ে তাদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে যাচ্ছে সফিকুল। মেজ ভাই মোঃ সুজন মিয়া হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যকাউন্টিং বিভাগে পড়ছেন। ছোট ভাই রণচন্ডি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভাল ফলাফলের জন্য দিন গুনছেন।

প্রতিকুল অবস্থা সত্বেও পরিবারের বিশাল দায় নিয়ে বড়ছেলে সফিকুলের দুর্নিবার স্বপ্ন দেখার মনোবল দেখে বাবা নাজিম উদ্দিনের বুক ভরে উঠত। জীবনে অনেক ঝড়ঝান্ডা পুরুনো পক্ষাঘাত মানুষটি ভবিষ্যতে বিজয় নিশান উড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির নির্মম ঝড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। আর হয়ত বিজয় নিশান উড়বে না তার পরিবারে এমনই হতাশা নেমে এসেছে।

পক্ষাঘাতের কারণে ডান হাত ও ডান পা অবশ, নিশ্চল নাজিম উদ্দিনের। চেয়ারে বসেই প্রাকৃতিক কাজ সাড়েন। অন্যের সাহায্য ছাড়া এক কদমও চলতে পারেন না। এই অসুস্থ্য মানুষটির পক্ষে খোলা আকাশের নীচে থাকা আর এক কষ্টের। তাই এলাকার মানবিক লোকজন ও ছোটভাইয়ের জামাতা শাহজাহান মিয়া (৪০) ৪টি পুরোনো টিন দিয়ে একটি চালা করে দিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার থেকে একটি কম্বল ও কিছু খাদ্য সামগ্রী এবং বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।