সৈয়দপুর ০৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খানসামায় শিক্ষক নিয়োগে ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ 

মো. আজিজার রহমান
  • আপডেট সময় : ১০:১৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
মো. আজিজার রহমান, দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শাপলা স্কুল এন্ড কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরী ও সভাপতি মাহফুজ চৌধুরীর নামে শিক্ষক নিয়োগে ভুয়া ফলাফল তৈরি করে নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
তৎকালীন সভাপতির মৃত্যুর পর পুরো অভিযোগই এখন অধ্যক্ষের দিকে ছুড়েছেন, উপজেলার কায়েমপুর এলাকার ভান্ডারদহ গ্রামের আফছার আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম।
উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় ২ একর ৯ শতাংশ জমির উপর ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্কুল এন্ড কলেজটি। এরপর ১৯৯৭ সালে এমপিওভুক্ত হয়।
সূত্র থেকে জানা যায়, মরহুম মাহফুজ চৌধুরী সভাপতির ও অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরীর দায়িত্ব পালনকালে এই নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষা গত ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর দিনাজপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষায় আবেদনকারী ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষা যথাসময়ে ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর যথারীতি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় তৎকালীন সভাপতি মূল্যায়ন সীটে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর প্রদান না করে ফাঁকা নম্বর ফর্দ রেখে দেয়। তবে তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও গভর্নিং বডির সদস্য এবং তৎকালীন অধ্যক্ষ মৌখিক পরীক্ষার মূল্যায়ন সীটে প্রার্থীদের প্রাপ্ত মার্কস প্রদান এবং মুল্যায়ন সীটে স্বাক্ষর প্রদান করেন। তৎকালীন সভাপতি নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের কার্যক্রম শেষ না করে স্থান ত্যাগ করেন। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতির মৌখিক নম্বর ফর্দে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর না থাকা ও নিয়োগ বোর্ডের সকল কাজ শেষ না করে চলে যাওয়ার কারণে ইসলাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদের কোনো ফলাফল সীট তৈরি করা হয়নি। ফলে উক্ত বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলও প্রকাশিত হয়নি। এ ঘটনার পরবর্তীতে সেই পদে নিয়োগ পান উপজেলার টংগুয়া গ্রামের মৃত. মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান (মাছুম)। এতেই বাধে বিপত্তি, শুরু হয় আইনি লড়াই।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, শাপলা গালর্স স্কুল এন্ড কলেজে প্রভাষক পদে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে আমি আবেদন করি। আমিসহ ১৩ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেই। কিন্তু ফলাফল না নিয়েই তৎকালীন সভাপতি সেখান থেকে চলে যান। কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর দেখি সেই নিয়োগে একজনকে নিয়োগ দেয়। এরপর আমি খানসামা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করি। সেখানে আমার পক্ষেই রায় হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ জজ আদালতে আপিল করে। সেখানেও আমি রায় পাই। এরপর তারা আবারো হাইকোর্টে আবারো আপিল করে। তারা ভুয়া রেজাল্ট সীট প্রদান করে। তবে আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, সেই পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। এই ভুয়া ফলাফল তালিকা বাতিল করে আমাকে নিয়োগ দানে সরকারের নিটক আকুল আবেদন করছি।
এ বিষয়ে আরেক চাকুরী প্রত্যাশী মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, আমি সেই সময়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু আমি ফলাফল পাইনি।
তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এই বিষয়ে পিবিআই আমার কাছে রিপোর্ট চায়। আমি সঠিক রিপোর্ট দিয়েছি। আমি চাই আপনারাও সঠিকটা তুলে ধরেন।
তৎকালীন আরেজ ডিজি প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, এত বড় জালিয়াতি তারা কিভাবে করে। জালিয়াতির শেষ সীমানা পার করেছে।
বর্তমান ইসলাম ইতিহাসের বিষয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক মো. মাহবুবুর রহমান (মাছুম) বলেন, সেই পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। এরপর নিয়োগপত্র পেয়ে যোগদান করি। সেই থেকে আমি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠদান প্রদান করছি।
এ বিষয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরী বলেন, সে সময়ে দুটি বিষয়ের নিয়োগ হয়। ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারিনি। একটি গন্ডগোল হওয়ার কারণে তৎকালীন সভাপতি সেখান থেকে চলে যায়। তাই ফলাফল দিতে পারিনি। পরবর্তীতে সভাপতি কিভাবে ফলাফল দেয় সেটা তার এখতিয়ার ছিল। আমি এই বিষয়টি নিয়ে জানতাম না। আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে সেটি হয়েছিল।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেরিনা চৌধুরী বলেন, এটি অনেক আগের নিয়োগ। আমাদের যে স্যার ও সভাপতি বা কমিটি ছিলেন ওনারাই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে কিছুই জানি না সবে মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে এখনো পুরোপুরি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন নি। এছাড়া যে কয়েকজন স্টাফের তালিকা দিয়েছে, তাদের সাথে নিয়েই কাজ করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


খানসামায় শিক্ষক নিয়োগে ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ 

আপডেট সময় : ১০:১৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
মো. আজিজার রহমান, দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শাপলা স্কুল এন্ড কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরী ও সভাপতি মাহফুজ চৌধুরীর নামে শিক্ষক নিয়োগে ভুয়া ফলাফল তৈরি করে নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
তৎকালীন সভাপতির মৃত্যুর পর পুরো অভিযোগই এখন অধ্যক্ষের দিকে ছুড়েছেন, উপজেলার কায়েমপুর এলাকার ভান্ডারদহ গ্রামের আফছার আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম।
উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় ২ একর ৯ শতাংশ জমির উপর ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্কুল এন্ড কলেজটি। এরপর ১৯৯৭ সালে এমপিওভুক্ত হয়।
সূত্র থেকে জানা যায়, মরহুম মাহফুজ চৌধুরী সভাপতির ও অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরীর দায়িত্ব পালনকালে এই নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষা গত ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর দিনাজপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষায় আবেদনকারী ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষা যথাসময়ে ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর যথারীতি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় তৎকালীন সভাপতি মূল্যায়ন সীটে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর প্রদান না করে ফাঁকা নম্বর ফর্দ রেখে দেয়। তবে তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও গভর্নিং বডির সদস্য এবং তৎকালীন অধ্যক্ষ মৌখিক পরীক্ষার মূল্যায়ন সীটে প্রার্থীদের প্রাপ্ত মার্কস প্রদান এবং মুল্যায়ন সীটে স্বাক্ষর প্রদান করেন। তৎকালীন সভাপতি নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের কার্যক্রম শেষ না করে স্থান ত্যাগ করেন। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতির মৌখিক নম্বর ফর্দে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর না থাকা ও নিয়োগ বোর্ডের সকল কাজ শেষ না করে চলে যাওয়ার কারণে ইসলাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদের কোনো ফলাফল সীট তৈরি করা হয়নি। ফলে উক্ত বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলও প্রকাশিত হয়নি। এ ঘটনার পরবর্তীতে সেই পদে নিয়োগ পান উপজেলার টংগুয়া গ্রামের মৃত. মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান (মাছুম)। এতেই বাধে বিপত্তি, শুরু হয় আইনি লড়াই।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, শাপলা গালর্স স্কুল এন্ড কলেজে প্রভাষক পদে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে আমি আবেদন করি। আমিসহ ১৩ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেই। কিন্তু ফলাফল না নিয়েই তৎকালীন সভাপতি সেখান থেকে চলে যান। কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর দেখি সেই নিয়োগে একজনকে নিয়োগ দেয়। এরপর আমি খানসামা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করি। সেখানে আমার পক্ষেই রায় হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ জজ আদালতে আপিল করে। সেখানেও আমি রায় পাই। এরপর তারা আবারো হাইকোর্টে আবারো আপিল করে। তারা ভুয়া রেজাল্ট সীট প্রদান করে। তবে আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, সেই পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। এই ভুয়া ফলাফল তালিকা বাতিল করে আমাকে নিয়োগ দানে সরকারের নিটক আকুল আবেদন করছি।
এ বিষয়ে আরেক চাকুরী প্রত্যাশী মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, আমি সেই সময়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু আমি ফলাফল পাইনি।
তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এই বিষয়ে পিবিআই আমার কাছে রিপোর্ট চায়। আমি সঠিক রিপোর্ট দিয়েছি। আমি চাই আপনারাও সঠিকটা তুলে ধরেন।
তৎকালীন আরেজ ডিজি প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, এত বড় জালিয়াতি তারা কিভাবে করে। জালিয়াতির শেষ সীমানা পার করেছে।
বর্তমান ইসলাম ইতিহাসের বিষয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক মো. মাহবুবুর রহমান (মাছুম) বলেন, সেই পরীক্ষায় আমি প্রথম হই। এরপর নিয়োগপত্র পেয়ে যোগদান করি। সেই থেকে আমি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠদান প্রদান করছি।
এ বিষয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ মনজেল হক চৌধুরী বলেন, সে সময়ে দুটি বিষয়ের নিয়োগ হয়। ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারিনি। একটি গন্ডগোল হওয়ার কারণে তৎকালীন সভাপতি সেখান থেকে চলে যায়। তাই ফলাফল দিতে পারিনি। পরবর্তীতে সভাপতি কিভাবে ফলাফল দেয় সেটা তার এখতিয়ার ছিল। আমি এই বিষয়টি নিয়ে জানতাম না। আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে সেটি হয়েছিল।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেরিনা চৌধুরী বলেন, এটি অনেক আগের নিয়োগ। আমাদের যে স্যার ও সভাপতি বা কমিটি ছিলেন ওনারাই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে কিছুই জানি না সবে মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে এখনো পুরোপুরি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন নি। এছাড়া যে কয়েকজন স্টাফের তালিকা দিয়েছে, তাদের সাথে নিয়েই কাজ করছি।