সৈয়দপুর ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীলফামারীর ঐতিহাসিক রাজারবাড়ী ‘হরিশ্চন্দ্রপাঠ’ ঐতিহ্য হারাচ্ছে

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৬৯ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির: নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’ নামে পরিচিত।
পৌনে দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ মাটির ওপরে দৃশ্যমান। ঢিবির মাঝে পাঁচটি বিশাল কালো পাথর ঘেরা স্থানে এক সময় রাজবাড়ির মূল কাঠামো ছিল। জনশ্রæতি আছে, প্রাচীনকালের এই স্থাপত্যটি অলৌকিকভাবে এক রাতেই মাটির নিচে দেবে যায়।

জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এই রাজবাড়িতে বিচার কাজ, পুঁথিপাঠ, এবং পূজা-পার্বণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত হত। বাড়িটির নামানুসারে পুরো গ্রামের নাম হয় ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’।

সাবেক ইউপি সদস্য অতুল রায় বলেন, ‘এই ঢিবির উচ্চতা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। সময়ের সঙ্গে তা কমে এখন ১০-১২ ফুট হয়েছে। পাথরের কিছু অংশ মাঝে মাটির ওপরে ভেসে ওঠে।’

প্রতিবছর ১লা ফাল্গুনে এখানে শিবরাত্রি মেলা বসে। মেলায় স্থানীয় পণ্যের বৈচিত্র সমাহার দেখা যায়। পাওয়া যায় গুড়ের জিলাপি, চিনির বাতাসা, তেলপিঠা, কাচের ও মাটির তৈজসপত্র, কাঠের আসবাবপত্র ও খেলনা। সরেজমিনে দেখা যায়, একটি টিনশেড মন্দির ও রাজবাড়ির কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে। সেই আমলের একটি বিশাল বটগাছও রয়েছে, যেখানে আগে অসংখ্য হরিতাল পাখির কলতান ছিল। এখন আর কলতানে মূখরিত নয় স্থানটি।

জনশ্রুতি রয়েছে, ব্রিটিশ আমলে এটি খোড়ার সময় একটি কক্ষের দরজার সন্ধান পাওয়া যায়। আটজন শ্রমিক সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে আর সেটি খোলা যায়নি। এরপর থেকে আর সংস্কার হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা নগেন্দ্র রায় (৭০) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, কেউ এই জায়গা থেকে কিছু নিয়ে গেলে রক্তপাত হয়ে মারা যায়। তাই এলাকাটি অলৌকিক বলে মনে করা হয়।’১৯৯৮ সালে জেলা প্রাসনের উদ্যোগে এটি পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, ‘এই এলাকাকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, ‘জেলায় অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। আমরা প্রতœতাত্তি¡ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, জেলায় আরও কয়েকটি পুরাকীর্তি রয়েছে ভীমের মায়ের চুলা, পাল রাজার বাড়ি, বাহালী পাড়া জমিদার বাড়ি, টুপামারী কাছারিবাড়ি, বিন্না দিঘি (নীলসাগর), নীলকুঠি ও দূর্বাছড়ি গ্রামের মোগল আমলের স্থাপত্য ও ভেরভেরীর চাঁন খোসালের মসজিদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


নীলফামারীর ঐতিহাসিক রাজারবাড়ী ‘হরিশ্চন্দ্রপাঠ’ ঐতিহ্য হারাচ্ছে

আপডেট সময় : ০১:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

ফজল কাদির: নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’ নামে পরিচিত।
পৌনে দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ মাটির ওপরে দৃশ্যমান। ঢিবির মাঝে পাঁচটি বিশাল কালো পাথর ঘেরা স্থানে এক সময় রাজবাড়ির মূল কাঠামো ছিল। জনশ্রæতি আছে, প্রাচীনকালের এই স্থাপত্যটি অলৌকিকভাবে এক রাতেই মাটির নিচে দেবে যায়।

জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এই রাজবাড়িতে বিচার কাজ, পুঁথিপাঠ, এবং পূজা-পার্বণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত হত। বাড়িটির নামানুসারে পুরো গ্রামের নাম হয় ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’।

সাবেক ইউপি সদস্য অতুল রায় বলেন, ‘এই ঢিবির উচ্চতা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। সময়ের সঙ্গে তা কমে এখন ১০-১২ ফুট হয়েছে। পাথরের কিছু অংশ মাঝে মাটির ওপরে ভেসে ওঠে।’

প্রতিবছর ১লা ফাল্গুনে এখানে শিবরাত্রি মেলা বসে। মেলায় স্থানীয় পণ্যের বৈচিত্র সমাহার দেখা যায়। পাওয়া যায় গুড়ের জিলাপি, চিনির বাতাসা, তেলপিঠা, কাচের ও মাটির তৈজসপত্র, কাঠের আসবাবপত্র ও খেলনা। সরেজমিনে দেখা যায়, একটি টিনশেড মন্দির ও রাজবাড়ির কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে। সেই আমলের একটি বিশাল বটগাছও রয়েছে, যেখানে আগে অসংখ্য হরিতাল পাখির কলতান ছিল। এখন আর কলতানে মূখরিত নয় স্থানটি।

জনশ্রুতি রয়েছে, ব্রিটিশ আমলে এটি খোড়ার সময় একটি কক্ষের দরজার সন্ধান পাওয়া যায়। আটজন শ্রমিক সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে আর সেটি খোলা যায়নি। এরপর থেকে আর সংস্কার হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা নগেন্দ্র রায় (৭০) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, কেউ এই জায়গা থেকে কিছু নিয়ে গেলে রক্তপাত হয়ে মারা যায়। তাই এলাকাটি অলৌকিক বলে মনে করা হয়।’১৯৯৮ সালে জেলা প্রাসনের উদ্যোগে এটি পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, ‘এই এলাকাকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, ‘জেলায় অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। আমরা প্রতœতাত্তি¡ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, জেলায় আরও কয়েকটি পুরাকীর্তি রয়েছে ভীমের মায়ের চুলা, পাল রাজার বাড়ি, বাহালী পাড়া জমিদার বাড়ি, টুপামারী কাছারিবাড়ি, বিন্না দিঘি (নীলসাগর), নীলকুঠি ও দূর্বাছড়ি গ্রামের মোগল আমলের স্থাপত্য ও ভেরভেরীর চাঁন খোসালের মসজিদ।