সৈয়দপুর ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীলফামারীর মেধাবী সাকিব উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শংকিত

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ১২:০৯:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ১২৯ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদিরঃ কোন সংকটেই দমিয়ে রাখতে পারেনি ফেরিওয়ালার সন্তান সাকিব খানকে। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। দারিদ্রতা তার জীবনে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে। এর পরও উচ্চ শিক্ষা নেয়ার স্বপ পূরণ করতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে সাকিব।

নীলফামারীর সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের শালহাটি গ্রামের ফেরি করে কাপড় বিক্রী করা মহসীন আলীর তিন ছেলের মধ্য সবার বড় সাকিব খান। বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমি নেই তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে কাপড় নিয়ে বিক্রী করে মহসিন। এরপরও সব সময় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। একার রোজগারে ৫ সদস্যের সংসার ঠিকমতো চলত না, সেখানে ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচ যোগাবে কোথায় থেকে। ফলে জিপিএ-৫ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর লেখা-পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় সাকিবের। কিন্তু ছেলের মেধা ও প্রবল ইছা শক্তির কাছে সকল প্রতিবন্ধকতা হার মানে।

এলাকাবাসি ও শিক্ষকদের সাহায্য-সহযাগিতায় নীলফামারী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে সাকিব। এরপর নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে মানবিক বিভাগে ৬ষ্ট স্থান অধিকার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় কলা,আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযাগ পেয়ে আবারও তার মেধা ও ইচ্ছা শক্তির প্রমান দেয় সাকিব । এই শাখায় তার মেধাক্রম ১১১৩। অর্থাভাবে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতে না পারলেও মেধা আর অদম্য ইছা শক্তিই তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।

সাকিবের ইচ্ছা সে প্রশাসনিক বড় কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সবা করতে চায়। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা অব্যাহত রাখত চায় । কিন্তু দরিদ্র পিতা পারবে কি তার সে সাধ পুরণ করতে? পারবে কি তার পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যেতে? এরকম নানা শঙ্কা এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাকিবকে।

ছেলের সাফল্য আনন্দের মধ্যেই কষ্ট তাড়া করে সাকিবের মা কমলা বেগমকে। ছেলের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেদে বলেন, অনেক সময়ই না খেয়ে স্কুল-কলেজ যতে হয়েছে ছেলেকে। তার পরও থেমে থাকেনি তার মেধা। সে শুধু একটাই বলছে “মা যত কষ্টই হউক আমাকে বড় হতে হব।

পিতা মহসিন আলী জানান, ফরি করে কাপড় বিক্রী করা তার একমাত্র পেশা। কোন কারনে গ্রামে যেতে না পারলে সে দিন তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযাগ পাওয়া ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তার চিন্তার শেষ নেই।

তিনি বলেন, ছেলের ভর্তি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ কিভাবে যোগাবো। এ চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। ছেলের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।

নীলফামারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সাকিবের মেধার কাছে হার মেনেছে সকল বাধা। অদম্য এ মেধাবীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সহযোগীতায় দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


নীলফামারীর মেধাবী সাকিব উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শংকিত

আপডেট সময় : ১২:০৯:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

ফজল কাদিরঃ কোন সংকটেই দমিয়ে রাখতে পারেনি ফেরিওয়ালার সন্তান সাকিব খানকে। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। দারিদ্রতা তার জীবনে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে। এর পরও উচ্চ শিক্ষা নেয়ার স্বপ পূরণ করতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে সাকিব।

নীলফামারীর সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের শালহাটি গ্রামের ফেরি করে কাপড় বিক্রী করা মহসীন আলীর তিন ছেলের মধ্য সবার বড় সাকিব খান। বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমি নেই তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে কাপড় নিয়ে বিক্রী করে মহসিন। এরপরও সব সময় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। একার রোজগারে ৫ সদস্যের সংসার ঠিকমতো চলত না, সেখানে ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচ যোগাবে কোথায় থেকে। ফলে জিপিএ-৫ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর লেখা-পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় সাকিবের। কিন্তু ছেলের মেধা ও প্রবল ইছা শক্তির কাছে সকল প্রতিবন্ধকতা হার মানে।

এলাকাবাসি ও শিক্ষকদের সাহায্য-সহযাগিতায় নীলফামারী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে সাকিব। এরপর নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে মানবিক বিভাগে ৬ষ্ট স্থান অধিকার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় কলা,আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযাগ পেয়ে আবারও তার মেধা ও ইচ্ছা শক্তির প্রমান দেয় সাকিব । এই শাখায় তার মেধাক্রম ১১১৩। অর্থাভাবে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতে না পারলেও মেধা আর অদম্য ইছা শক্তিই তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।

সাকিবের ইচ্ছা সে প্রশাসনিক বড় কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সবা করতে চায়। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা অব্যাহত রাখত চায় । কিন্তু দরিদ্র পিতা পারবে কি তার সে সাধ পুরণ করতে? পারবে কি তার পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যেতে? এরকম নানা শঙ্কা এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাকিবকে।

ছেলের সাফল্য আনন্দের মধ্যেই কষ্ট তাড়া করে সাকিবের মা কমলা বেগমকে। ছেলের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেদে বলেন, অনেক সময়ই না খেয়ে স্কুল-কলেজ যতে হয়েছে ছেলেকে। তার পরও থেমে থাকেনি তার মেধা। সে শুধু একটাই বলছে “মা যত কষ্টই হউক আমাকে বড় হতে হব।

পিতা মহসিন আলী জানান, ফরি করে কাপড় বিক্রী করা তার একমাত্র পেশা। কোন কারনে গ্রামে যেতে না পারলে সে দিন তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযাগ পাওয়া ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তার চিন্তার শেষ নেই।

তিনি বলেন, ছেলের ভর্তি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ কিভাবে যোগাবো। এ চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। ছেলের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।

নীলফামারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সাকিবের মেধার কাছে হার মেনেছে সকল বাধা। অদম্য এ মেধাবীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সহযোগীতায় দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।