শহীদ সাঈদের সাথী অকুতোভয় মুনের শরীরে দুই শতাধিক গুলির ছররায় ভরা

- আপডেট সময় : ০৯:৫৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২৮ বার পড়া হয়েছে

ফজল কাদিরঃ শহীদ আবু সাঈদের সাথী অকুতোভয় শিক্ষার্থী মাহবুব আল হাসান মুন (১৯)। সূচনাটা ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। দানব পুলিশের গুলিতে যখন আবু সাঈদ শহীদ হন, তার আগে গুলিতে মুনের তরতাজা শরীরে দুই শতাধিক গুলির ছররা বিদ্ধ হয়। তখন ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে দেশ উত্তাল হলে গুলিবিদ্ধ মুন ঘরে বসে থাকেনি। আন্দোলনের চুড়ান্ত বিজয়গাঁথা রচিত না হওয়া পর্যন্ত গুরুতর আহত মুন প্রাণপণ লড়তে থাকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ভিন্নমাত্রার রূপও পেল। বদলে গেল সব কিছু। শুধু বদলালো না লড়াকু মুনের জীবন। শরীরে অবাঞ্চিত গুলির ছররা নিয়ে যন্ত্রনায় কুড়ে খাচ্ছে তাকে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করা না হলে কোন এক সময়ে পচন ধরতে পারে তার শরীরে। বাইরে চিকিৎসা করানোর তেমন সঙ্গতিও নেই সবজি বিক্রেতা বাবার।
১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধের মাত্র পনের মিনিট আগে সট্গান ও টিয়ারসেলের প্রায় দুই শতাধিক ছররা ঝাঝরা করে মুনের ডান হাত, মুখ ও বুকে।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের পানিয়ারপুকুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সে। রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষষ্ট সেমিষ্টারের মেধাবী ছাত্র। রংপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার শরীরের চারটি বড় ধরনের ছররা অপসারিত করতে পারলেও সুক্ষ ছররাগুলো অপসারণ করতে পারেনি। রংপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে ১৬ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে রংপুরের রণাঙ্গনে মাঠে নামে মুন। বুলেটের ক্ষত যেন ছুঁতে পারেনি তাকে। ৬ আগস্ট পর্যন্ত রক্তে ভেজা রাজপথে আন্দোলনে সরব ছিল সে।
গুলির ছররার যন্ত্রনা বেশী হলে গত ২১ আগস্ট ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করায় মুন। ডাক্তার ছাড়পত্র দেয়ার আগে বলে দেন, গুলির ছররাগুলো আপাতত ক্ষতি না করলেও এক সময় ইনফেকশন বা পচন ধরার সম্ভবনা রয়েছে। শরীর থেকে সব ছররা অপসারিত করতে হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে।
তার বাবা আব্দুল খালেক জানান, আমি একজন ক্ষুদে সবজি বিক্রেতা। টানাপোড়েনের সংসারে ছেলের জন্য লাখ টাকা খরচ করেছি। তাকে বিদেশে চিকিৎসা করানো আমার কাছে স্বপ্নের মত। মা মুন্নি আক্তারও মেধাবী ছেলে মুনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত।
মুন ১৬ জুলাই সেই উত্তাল আবু সাঈদ চত্বরের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, পুলিশের আগে ছাত্রলীগই আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। সাঈয়েদ ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র পনের মিনিট আগে আমি গুলিতে ঝাঝরা হই। তখন দুপুর দুইটা বার মিনিট। সাঈয়েদ ভাই গুলিবিদ্ধ হন দুইটা দুইটা সাতাশ মিনিটে। আমাদের রক্তাক্ত শরীর দেখে ভাইয়ের মাথা ঠিক ছিল না। ভাই বুক চেতিয়ে দেন। বলেন, কত গুলি আমাকে কর। দানব পুলিশ অকাতরে গুলি করে ভাইকে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে পরে গোটা এলাকা। হাসপাতালে ভাইয়ের নিথর দেহের পাশে ঝাঝরা শরীর নিয়ে আমিও কাতরাচ্ছিলাম। লাশ গুমের অপচেষ্ঠাও করা হয়েছিল তখন। কিন্তু ছাত্র-জনতার বাঁধায় লাশ দিতে বাধ্য হয় তাবেদারী প্রশাসন।
মুন বলেন, উন্নত চিকিৎসা করে সুস্থ্য জীবন ফিরে পেতে চাই। দেশের ক্রান্তিলগ্নে কিংবা মহৎ কোন কাজে অংশগ্রহন করলে ধন্য হবে আমার জীবন।