সৈয়দপুর ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐতিহাসিক ১৭ মে ও স্বদেশের মাটিতে শেখ হাসিনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩ ৮৫ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঐ ঘাতক চক্র একই বছর ৩নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে।পরর্বতীতে ঘাতকরা আওয়ামী লিগের নেতার্কমী, সর্মথক ও মুক্তিযোদ্ধাদের বেছে বেছে হত্যা করে। এসব হত্যারকারণ ছিলো আওয়ামী লীগকে র্নিমূল করে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানি ধ্যান ধারণায় ফিরিয়ে নেওয়া।

ঐঅপশক্তি শুধু নেতা র্কমীদের হত্যা করেই খান্ত হয়নি- তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের মধ্য বিরোধ- বিভেদ সৃষ্টি করার। যাতে আওয়ামী লীগ চিরদিনের মতো শেষ হয়ে যায়।এসব কারণে ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে এই বিরোধ মারাত্মক আকার ধারন করে। তখন আওয়ামীলীগে দেখা দেয় কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে কয়েকটি উপদল। এসময় সংগঠনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে বিভক্তি থেকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করে। এজন্য উক্ত নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার সাথে দিল্লিতে গিয়ে দেখা করে এবং তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির আসন গ্রহনের প্রস্তাব করেন। মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবে রাজি হন।

১৯৮১ সালের ১৩, ১৪, ও ১৫ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি এবং আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক র্নিবাচিত করা হয়। সভাপতি র্নিবাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ১৭ মে স্বদশের মাটিতে ফিরে আসেন ৬ বছর পর। সেদিন তাঁকে বরণ করতে লাখো মানুষের সাথে আমিও ছিলাম।দিনটি জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। আমরা কয়েকদিন আগেই সংবাদ পাই আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে আসবেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর দলীয় নেতা র্কমীসহ দেশবাসির মধ্যো উল্লাসিত ভাব লক্ষ্য করা যায়। আমি নিজেও উল্লাসিত এবং উজ্জিবিত হই।প্রস্তুতি নিতে থাকি ১৭ মে বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য। এই জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও বন্ধু-বান্ধবরা সংগঠিত হতে থাকি। যথারীতি সবাইকে নিয়ে সকাল সকালেই বিমান বন্দরে উপস্থিত হই। অপেক্ষা করতে থাকি কখন আসবেন আমাদের প্রান প্রিয় নেত্রীর বিমানটি। সময় বাড়ার সাথে সাথে বিমান বন্দর পরিণত হয় এক বিশাল জন সমুদ্রে। আর চলছে স্লোগানে স্লোগানে উপস্থিত জনতার উল্লাস। সবার মুখে স্লোগান ছিলো শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম, হাসিনা তোমায় কথা দিলাম মুজিব হত্যা বদলা নেবো, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, মুজিবের বাংলায় খুনিদের বিচার হবে বিচার হবে, মুজিবের বাংলায় খুনিদের স্থান নাই স্থান নাই, এক মুজিব লুকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। স্লোগানে আমরাও পিছিয়ে ছিলাম না। আনন্দে উল্লাসিত হয়ে সেই ছাত্র জীবনের মতোই স্লোগান দিতে থাকি গলা ফাটিয়ে। এক র্পযায়ে নেত্রীর বহনকারী বিমানটি পৌছায়। বিমানটি দেখা মাত্র উপস্থিত জনতা স্লোগানে স্লোগানে বিমান বন্দর কাপিয়ে তোলে এবং সবাই বিমানের কাছে যাওয়ার জন্য ছুটে চলে। ফলে বিমান থেকে নেত্রীর নামার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয়নেতৃবৃন্দ বহু কষ্টে নেত্রীকে বিমান থেকেগাড়িতে তোলে। আমরা সকলে খুবই ভয়ে এবং আতঙ্কে ছিলাম যে ষড়যন্ত্রকারীরা নেত্রীর উপরে কোনোরকম হামলা করে কিনা। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

বিমান বন্দর থেকে গাড়িটি শেরে বাংলা নগর সংসদ ভবনের দিকে এগিয়ে চলে। রাস্তায় লোকে লোকারন্ন- গাড়ি এগাতে পারছে না। যে রাস্তা ৩০ মিনিটে অতিক্রম করা যায় সেই রাস্তা অতিক্রম করতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে। এদিকে গাড়িটি রাস্তায় আসার সাথে সাথে শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি এবং ঝড়। সেই সাথে চলে প্রচন্ড বিদ্যু চমকানো শব্দ। মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। কিন্তু তবুও মানুষ রাস্তা থেকে সরে যায়নি। তারা স্লোগানে স্লোগানে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। আমি বন্ধু বান্ধবসহ পায়ে হেটে শেরে বাংলা নগর র্পযন্ত আসি স্লোগান দিতে দিতেই। ভয়াবহ র্দুযোগর্পূণ অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় সংর্বধনা মঞ্চে ওঠেন আওয়ামি লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। সংর্বধনা সভার মঞ্চ করা হয় শেরে বাংলা নগর জাতীয় সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে। নেত্রীকে দেখা মাত্রই নেতা র্কমীদের কন্ঠে স্লোগান উঠে ‘জয় বাংলা’, জয় বঙ্গবন্ধু; শুভেচ্ছার স্বাগতম, শেখ হাসিনার আগমন , হাসিনা তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে, হাসিনা তোমাই কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেবো, মুজিবের বাংলায় খুনিদের স্থান নাই, স্থান নাই, মুজিব হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম, ইত্যাদি। সভার এক র্পযায়ে ভাষণ দিতে দাড়ান জননেত্রী শেখ হাসিনা।মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। নেত্রীর কান্না দেখে আমরা সকলেই আবেগে আফলুত হয়ে পড়ি এবং আমাদেরও কান্না আসে। আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন- আমি পিতা-মাতা, ভাই- বোন, আত্মীয় স্বজন সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি, আপনারাই আমার আপনজন। আপনাদের নিয়েই আমি বেচে থাকতে চাই। তিনি কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশ বাস্তবায়নের জন্য জীবন উর্সগ করে দেবো। তিনি আরো বলেন, আজকের সভায় আমি লাখো মুখ দেখছি। শুধু নেই প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইবোন, আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোন দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে আর ডাকবো না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী, সংসার, সন্তান রেখে আমি আপনাদের কাছে চলে এসেছি। তিনি আরো বলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসেনি। আপনাদের বোন হিসেবে, আপনাদের মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন র্কমী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। তিনি আরো বলেন, আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি আগামীদিনের যাত্রা শুরু করতে চাই বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন ও শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আব্দুল মালেক উকিল, আব্দুল রাজ্জাক প্রমুখ।

দেশে এসেই তিনি দলীয় নেতৃত্ব গ্রহন করেন এবং দলকে সংগঠিত করতেউদ্যোগী হন। পরের দিন থেকেই তিনি দেশের এক প্রান্তর থেকে আরেক প্রান্তরে সভা সমাবেশ করে বেড়ান। এতে দলীয় নেতা র্কমী ও সর্মথকদের মধ্য সারা জাগে। ১৫ আগষ্টের পরে ঝিমিয়ে পড়া নেতা র্কমীরা গা ঝাড়া দিয়ে নতুন উদ্ধমে দলীয় র্কমকাণ্ডে যুক্ত হতে থাকে। এসময় আমিও ব্যাপকভাবে উ সাহিত ও উজ্জীবিত হই। কারন ১৫ আগষ্টের পরে আমাদের অনেক প্রতিকুলতা বা বিরোধীতার সম্মখীন হতে হয়েছে। তখন আমরা অনেককেই নিরব থাকতে দেখেছি, অনেকেই দূরে থাকতে দেখেছি। কিন্তু ১৭ মে- এর পরে অনেকেই যোগাযোগ করতে থাকে, তারা আমাদের সাথে র্কাযক্রমে অংশগ্রহন করতে থাকে। ফলে আমিও বিগত দিন থেকে বেশি বেশি র্কাযক্রম চালাতে থাকি।

এই র্কাযক্রম যেমনই করেছি নিজের র্কমস্থলে তেমনি করেছি জন্মস্থান চিরিরবন্দর সহ দিনাজপুরে। এভাবে সারা দেশে র্কমী সর্মথকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংগঠনও ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা দিন রাত পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে শক্তিশালী করছেন। ঠিক সেই সময় ১৯৮১ সালের ৩০ মে- রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্রগ্রামে নিহত হন। এতে দেশ অস্থিতিশীল হওয়ার অবস্থা দেখা দেয়। এই মুর্হূতে শেখ হাসিনার গঠন মুলক ভূমিকার ফলে দেশ অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্তি পায় এবং দেশে রাষ্ট্রপতি র্নিবাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৫ নভেম্বর। র্নিবাচনে সরকারী দল বিএনপি প্রাথী সাবেক বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এবং আওয়ামী লীগ প্রাথী ড. কামাল হোসেন। র্নিবাচনে সরকারি দল ষড়যন্ত্র করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর বিএনপির মধ্য বিভিন্ন ধরনের উপদলের সৃষ্টি হয়। সরকারি দলের নানামুখি অপর্কমের কারণে দেশে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ত কালীন সেনা প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ১৯৮২ সালের ২৪ র্মাচ। এরশাদ ক্ষমতা দখলের কিছুদিন পরেই দেশে শুরু হয় সামরিক শাসন বিরোধি আন্দেলন। আন্দেলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। র্দীঘ ৯ বছরের আন্দেলনের ফলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে। এরশাদের শাসনামালের একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না। সেটি ১৯৮৫ সালের আমার একটি সাহসী পদক্ষেপের কথা। পদক্ষেপটি ছিলো আমার বহু দিনের লালিত সপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা এবং তা বাস্তবায়ন করা। উদ্যোগটি ছিল ঢাকার মুহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামনাগারে বঙ্গবন্ধুর ৭ র্মাচের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ৪নং সেক্টরের কনান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধামেজর জেনারেল সি আর দত্তের (বীর উত্তম) নির্দেশে ১৯৮১ সালে পঙ্গু হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমাকে অনারারি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় আমি মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামাগারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচারকরি। ট্রাস্টের তখন চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক যুদ্ধাহতবীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানবীর বিক্রম(পরর্বতীতে সেনাপ্রধান)। তিনি আমাকে বললেন আপনার এই কাজে আমার সম্মতি ও সমর্থন আছে, তবে আমি যখন উপস্থিত থাকি তখন ভাষণ প্রচার বন্ধ রাখবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল দেশ বিরোধী ঘাতক। এরপর তারা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নামও তাঁর র্কাযক্রম এবং মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই উদ্দেশ্য তারা সকল প্রকার সরকারি বেতার, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর র্কাযক্রম প্রচার নিষিদ্ধ করে। উক্ত র্নিদেশ মোতাবেক মোস্তাক, জিয়া ও এরশাদ, শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারন করা নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা, বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করাও ছিলো অপরাধ যোগ্য। একারণে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে তখন কম মানুষই সাহস পেতো। এই দূরদিনে আমি একজন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক হিসেবে অন্যদের মত মুখ বন্ধ করে বা কলম বন্ধ করে চুপ থাকতে পারেনি।যার জন্য আমি জীবনের ঝুকি নিয়ে বা সকল প্রকার শাস্তি ভোগ করার মতো মানসিকতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ র্মাচের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা উদ্যোগ গ্রহন করি। এই জন্য আমার এই পদক্ষেপকে সাহসী র্কম বলে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। আজও মনে পড়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ১৯৮১ সালের ১৭ মে- শেরে বাংলা নগরের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। সেদিন ভাষণে যা তিনি বলেছিলেন- তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। সত্যি তিনি প্রায় ৪৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছিলেন জাতিকে মুক্তি দিয়ে মুখে হাসি ফোটাব। এই ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। বিগত ৪৩ বছরে নেতৃত্ব দিয়ে ৪ বার আওয়ামী লীগকে জনগণের রায়ে র্নিবাচিত করে ক্ষমতাসীন করেছেন। এই সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে ক্রমশই উন্নত থেকে উন্নতর করে যাচ্ছেন। তার এই শাসনকাল বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত হচ্ছে।আজকের এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে বিজয়ী করতে হবে। তাহলে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা দেশকে আরো উন্নত থেকে উন্নতর করতে সক্ষম হবেন। তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের ও স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং স্মাট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীন বাংলাদেশ হবে একটি সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
লেখকঃ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ-দিনাজপুর, উপদেষ্টা চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপদেষ্টা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট (১৯৮১-২০০৭), উপদেষ্টা ঘাতক দালাল র্নিমূল কমিটি, প্রেসিডেন্ট স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন ঢাকা, চিফ কলসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, র্অথোপেডিক, ট্রমা এবং রিপ্লেসমেন্ট
র্সাজারি বিভাগ (ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট (এশিয়া প্যাসিফিক) সিকট, ফাউন্ডারও চেয়ারম্যান (এবি ফাউন্ডেশন) চিরিরবন্দর , দিনাজপুর, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ র্অথোপেডিক সোসাইটি এবং আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


ঐতিহাসিক ১৭ মে ও স্বদেশের মাটিতে শেখ হাসিনা

আপডেট সময় : ০৫:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঐ ঘাতক চক্র একই বছর ৩নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে।পরর্বতীতে ঘাতকরা আওয়ামী লিগের নেতার্কমী, সর্মথক ও মুক্তিযোদ্ধাদের বেছে বেছে হত্যা করে। এসব হত্যারকারণ ছিলো আওয়ামী লীগকে র্নিমূল করে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানি ধ্যান ধারণায় ফিরিয়ে নেওয়া।

ঐঅপশক্তি শুধু নেতা র্কমীদের হত্যা করেই খান্ত হয়নি- তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের মধ্য বিরোধ- বিভেদ সৃষ্টি করার। যাতে আওয়ামী লীগ চিরদিনের মতো শেষ হয়ে যায়।এসব কারণে ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে এই বিরোধ মারাত্মক আকার ধারন করে। তখন আওয়ামীলীগে দেখা দেয় কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে কয়েকটি উপদল। এসময় সংগঠনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে বিভক্তি থেকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করে। এজন্য উক্ত নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার সাথে দিল্লিতে গিয়ে দেখা করে এবং তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির আসন গ্রহনের প্রস্তাব করেন। মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবে রাজি হন।

১৯৮১ সালের ১৩, ১৪, ও ১৫ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি এবং আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক র্নিবাচিত করা হয়। সভাপতি র্নিবাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ১৭ মে স্বদশের মাটিতে ফিরে আসেন ৬ বছর পর। সেদিন তাঁকে বরণ করতে লাখো মানুষের সাথে আমিও ছিলাম।দিনটি জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। আমরা কয়েকদিন আগেই সংবাদ পাই আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে আসবেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর দলীয় নেতা র্কমীসহ দেশবাসির মধ্যো উল্লাসিত ভাব লক্ষ্য করা যায়। আমি নিজেও উল্লাসিত এবং উজ্জিবিত হই।প্রস্তুতি নিতে থাকি ১৭ মে বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য। এই জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও বন্ধু-বান্ধবরা সংগঠিত হতে থাকি। যথারীতি সবাইকে নিয়ে সকাল সকালেই বিমান বন্দরে উপস্থিত হই। অপেক্ষা করতে থাকি কখন আসবেন আমাদের প্রান প্রিয় নেত্রীর বিমানটি। সময় বাড়ার সাথে সাথে বিমান বন্দর পরিণত হয় এক বিশাল জন সমুদ্রে। আর চলছে স্লোগানে স্লোগানে উপস্থিত জনতার উল্লাস। সবার মুখে স্লোগান ছিলো শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম, হাসিনা তোমায় কথা দিলাম মুজিব হত্যা বদলা নেবো, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, মুজিবের বাংলায় খুনিদের বিচার হবে বিচার হবে, মুজিবের বাংলায় খুনিদের স্থান নাই স্থান নাই, এক মুজিব লুকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। স্লোগানে আমরাও পিছিয়ে ছিলাম না। আনন্দে উল্লাসিত হয়ে সেই ছাত্র জীবনের মতোই স্লোগান দিতে থাকি গলা ফাটিয়ে। এক র্পযায়ে নেত্রীর বহনকারী বিমানটি পৌছায়। বিমানটি দেখা মাত্র উপস্থিত জনতা স্লোগানে স্লোগানে বিমান বন্দর কাপিয়ে তোলে এবং সবাই বিমানের কাছে যাওয়ার জন্য ছুটে চলে। ফলে বিমান থেকে নেত্রীর নামার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয়নেতৃবৃন্দ বহু কষ্টে নেত্রীকে বিমান থেকেগাড়িতে তোলে। আমরা সকলে খুবই ভয়ে এবং আতঙ্কে ছিলাম যে ষড়যন্ত্রকারীরা নেত্রীর উপরে কোনোরকম হামলা করে কিনা। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

বিমান বন্দর থেকে গাড়িটি শেরে বাংলা নগর সংসদ ভবনের দিকে এগিয়ে চলে। রাস্তায় লোকে লোকারন্ন- গাড়ি এগাতে পারছে না। যে রাস্তা ৩০ মিনিটে অতিক্রম করা যায় সেই রাস্তা অতিক্রম করতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে। এদিকে গাড়িটি রাস্তায় আসার সাথে সাথে শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি এবং ঝড়। সেই সাথে চলে প্রচন্ড বিদ্যু চমকানো শব্দ। মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। কিন্তু তবুও মানুষ রাস্তা থেকে সরে যায়নি। তারা স্লোগানে স্লোগানে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। আমি বন্ধু বান্ধবসহ পায়ে হেটে শেরে বাংলা নগর র্পযন্ত আসি স্লোগান দিতে দিতেই। ভয়াবহ র্দুযোগর্পূণ অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় সংর্বধনা মঞ্চে ওঠেন আওয়ামি লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। সংর্বধনা সভার মঞ্চ করা হয় শেরে বাংলা নগর জাতীয় সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে। নেত্রীকে দেখা মাত্রই নেতা র্কমীদের কন্ঠে স্লোগান উঠে ‘জয় বাংলা’, জয় বঙ্গবন্ধু; শুভেচ্ছার স্বাগতম, শেখ হাসিনার আগমন , হাসিনা তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে, হাসিনা তোমাই কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেবো, মুজিবের বাংলায় খুনিদের স্থান নাই, স্থান নাই, মুজিব হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম, ইত্যাদি। সভার এক র্পযায়ে ভাষণ দিতে দাড়ান জননেত্রী শেখ হাসিনা।মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। নেত্রীর কান্না দেখে আমরা সকলেই আবেগে আফলুত হয়ে পড়ি এবং আমাদেরও কান্না আসে। আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন- আমি পিতা-মাতা, ভাই- বোন, আত্মীয় স্বজন সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি, আপনারাই আমার আপনজন। আপনাদের নিয়েই আমি বেচে থাকতে চাই। তিনি কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশ বাস্তবায়নের জন্য জীবন উর্সগ করে দেবো। তিনি আরো বলেন, আজকের সভায় আমি লাখো মুখ দেখছি। শুধু নেই প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইবোন, আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোন দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে আর ডাকবো না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী, সংসার, সন্তান রেখে আমি আপনাদের কাছে চলে এসেছি। তিনি আরো বলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসেনি। আপনাদের বোন হিসেবে, আপনাদের মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন র্কমী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। তিনি আরো বলেন, আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি আগামীদিনের যাত্রা শুরু করতে চাই বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন ও শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আব্দুল মালেক উকিল, আব্দুল রাজ্জাক প্রমুখ।

দেশে এসেই তিনি দলীয় নেতৃত্ব গ্রহন করেন এবং দলকে সংগঠিত করতেউদ্যোগী হন। পরের দিন থেকেই তিনি দেশের এক প্রান্তর থেকে আরেক প্রান্তরে সভা সমাবেশ করে বেড়ান। এতে দলীয় নেতা র্কমী ও সর্মথকদের মধ্য সারা জাগে। ১৫ আগষ্টের পরে ঝিমিয়ে পড়া নেতা র্কমীরা গা ঝাড়া দিয়ে নতুন উদ্ধমে দলীয় র্কমকাণ্ডে যুক্ত হতে থাকে। এসময় আমিও ব্যাপকভাবে উ সাহিত ও উজ্জীবিত হই। কারন ১৫ আগষ্টের পরে আমাদের অনেক প্রতিকুলতা বা বিরোধীতার সম্মখীন হতে হয়েছে। তখন আমরা অনেককেই নিরব থাকতে দেখেছি, অনেকেই দূরে থাকতে দেখেছি। কিন্তু ১৭ মে- এর পরে অনেকেই যোগাযোগ করতে থাকে, তারা আমাদের সাথে র্কাযক্রমে অংশগ্রহন করতে থাকে। ফলে আমিও বিগত দিন থেকে বেশি বেশি র্কাযক্রম চালাতে থাকি।

এই র্কাযক্রম যেমনই করেছি নিজের র্কমস্থলে তেমনি করেছি জন্মস্থান চিরিরবন্দর সহ দিনাজপুরে। এভাবে সারা দেশে র্কমী সর্মথকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংগঠনও ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা দিন রাত পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে শক্তিশালী করছেন। ঠিক সেই সময় ১৯৮১ সালের ৩০ মে- রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্রগ্রামে নিহত হন। এতে দেশ অস্থিতিশীল হওয়ার অবস্থা দেখা দেয়। এই মুর্হূতে শেখ হাসিনার গঠন মুলক ভূমিকার ফলে দেশ অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্তি পায় এবং দেশে রাষ্ট্রপতি র্নিবাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৫ নভেম্বর। র্নিবাচনে সরকারী দল বিএনপি প্রাথী সাবেক বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এবং আওয়ামী লীগ প্রাথী ড. কামাল হোসেন। র্নিবাচনে সরকারি দল ষড়যন্ত্র করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর বিএনপির মধ্য বিভিন্ন ধরনের উপদলের সৃষ্টি হয়। সরকারি দলের নানামুখি অপর্কমের কারণে দেশে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ত কালীন সেনা প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ১৯৮২ সালের ২৪ র্মাচ। এরশাদ ক্ষমতা দখলের কিছুদিন পরেই দেশে শুরু হয় সামরিক শাসন বিরোধি আন্দেলন। আন্দেলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। র্দীঘ ৯ বছরের আন্দেলনের ফলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে। এরশাদের শাসনামালের একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না। সেটি ১৯৮৫ সালের আমার একটি সাহসী পদক্ষেপের কথা। পদক্ষেপটি ছিলো আমার বহু দিনের লালিত সপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা এবং তা বাস্তবায়ন করা। উদ্যোগটি ছিল ঢাকার মুহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামনাগারে বঙ্গবন্ধুর ৭ র্মাচের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ৪নং সেক্টরের কনান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধামেজর জেনারেল সি আর দত্তের (বীর উত্তম) নির্দেশে ১৯৮১ সালে পঙ্গু হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমাকে অনারারি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় আমি মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামাগারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচারকরি। ট্রাস্টের তখন চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক যুদ্ধাহতবীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানবীর বিক্রম(পরর্বতীতে সেনাপ্রধান)। তিনি আমাকে বললেন আপনার এই কাজে আমার সম্মতি ও সমর্থন আছে, তবে আমি যখন উপস্থিত থাকি তখন ভাষণ প্রচার বন্ধ রাখবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল দেশ বিরোধী ঘাতক। এরপর তারা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নামও তাঁর র্কাযক্রম এবং মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই উদ্দেশ্য তারা সকল প্রকার সরকারি বেতার, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর র্কাযক্রম প্রচার নিষিদ্ধ করে। উক্ত র্নিদেশ মোতাবেক মোস্তাক, জিয়া ও এরশাদ, শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারন করা নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা, বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করাও ছিলো অপরাধ যোগ্য। একারণে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে তখন কম মানুষই সাহস পেতো। এই দূরদিনে আমি একজন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক হিসেবে অন্যদের মত মুখ বন্ধ করে বা কলম বন্ধ করে চুপ থাকতে পারেনি।যার জন্য আমি জীবনের ঝুকি নিয়ে বা সকল প্রকার শাস্তি ভোগ করার মতো মানসিকতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ র্মাচের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা উদ্যোগ গ্রহন করি। এই জন্য আমার এই পদক্ষেপকে সাহসী র্কম বলে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। আজও মনে পড়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ১৯৮১ সালের ১৭ মে- শেরে বাংলা নগরের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। সেদিন ভাষণে যা তিনি বলেছিলেন- তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। সত্যি তিনি প্রায় ৪৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছিলেন জাতিকে মুক্তি দিয়ে মুখে হাসি ফোটাব। এই ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। বিগত ৪৩ বছরে নেতৃত্ব দিয়ে ৪ বার আওয়ামী লীগকে জনগণের রায়ে র্নিবাচিত করে ক্ষমতাসীন করেছেন। এই সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে ক্রমশই উন্নত থেকে উন্নতর করে যাচ্ছেন। তার এই শাসনকাল বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত হচ্ছে।আজকের এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে বিজয়ী করতে হবে। তাহলে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা দেশকে আরো উন্নত থেকে উন্নতর করতে সক্ষম হবেন। তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের ও স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং স্মাট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীন বাংলাদেশ হবে একটি সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
লেখকঃ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ-দিনাজপুর, উপদেষ্টা চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপদেষ্টা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট (১৯৮১-২০০৭), উপদেষ্টা ঘাতক দালাল র্নিমূল কমিটি, প্রেসিডেন্ট স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন ঢাকা, চিফ কলসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, র্অথোপেডিক, ট্রমা এবং রিপ্লেসমেন্ট
র্সাজারি বিভাগ (ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট (এশিয়া প্যাসিফিক) সিকট, ফাউন্ডারও চেয়ারম্যান (এবি ফাউন্ডেশন) চিরিরবন্দর , দিনাজপুর, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ র্অথোপেডিক সোসাইটি এবং আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।