সৈয়দপুর ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিমলায় ”ট্রে পদ্ধতিতে” বোরো বীজতলা তৈরি করে চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক

ফজল কাদির
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফজল কাদির, নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় সমলয় চাষবাদে ”ট্রে পদ্ধতিতে” বোরো বীজতলা তৈরি কওে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ ডিমলা উপজেলায় ৩য় বারের মত করা হচ্ছে।

ডিমলা উত্তর তিত পাড়ায় মাঠে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে ”ট্রে পদ্ধতিতে” বীজতলা ও চারা তৈরির কাজ শেষে রোপণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে চাষিরা লাভবান হবেন বলে আশা উপজেলা কৃষি বিভাগের।

জানা গেছে, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপনের জন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরি আবশ্যক। এছাড়াও বোরোর বীজতলা ”ট্রে পদ্ধতিতে” করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হয় না। এই পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় ডিমলা সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া ভাটিয়াপারা চৌপথি সংলগ্ন তিতপাড়া মাঠের ১৫০ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৯২ জাতের এ ধান চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে উত্তর তিতপাড়া মাঠে ৪ হাজার ৫০০টি ট্রেতে ৬০০ কেজি বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়েছে।

এ বছর ট্রেতে বীজতলা, যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটাও হবে। অর্থাৎ এ বছর যুগোপযোগী আধুনিক পদ্ধতিতেই কৃষি কাজ হবে। এ পদ্ধতিতে চাষিরা কম খরচে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবে।

যুগোপযোগী ও আধুনিক পদ্ধতিতে এই তৃতীয়বার বীজতলা ও চারা তৈরির কাজে সার্বিক তত্ত¡াবধানে রয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মীর হাসান আল বান্না । ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে, এই চাষাবাদ চাষাবাদ খুবই সময়োপযোগী।

এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে ট্রেতে চারা উৎপাদনের ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়াও এই এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাল রপ্তানির ক্ষেত্রেও দারুণ অগ্রগতি হবে।

ডিমলা সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া ভাটিয়াপারা গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমর এবার প্রথমবারের মতো ৫ বিঘা জমি বোরো ধান ট্রেতে বীজতলা, যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটাও হবে। আশা করছি ভালো ফলন পাব।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা( কৃষিবিদ) শামীমা ইয়াসমিন জানান, ট্রের ওপর পরিমাণ মতো জৈব সার ব্যবহার করা হয়। পরে তা ২৫ থেকে ৩০ দিন পর মাদুরের মতো করে তোলা হয়। এরপর রোপণ যšের¿ মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়।

এ পদ্ধতিতে দুইজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেন। ”ট্রে পদ্ধতিতে” চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রæত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ সবল হয়ে বেড়ে ওঠে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, অত্যাধুনিক তথ্যনির্ভর এ প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অনেকে। সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ধান চাষে ফলন বাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য চাল উৎপাদন করাও সম্ভব হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মীর হাসান আল বান্না বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে চারা রোপণ করলে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করতে হয়। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে ট্রেতে বীজ বপন করতে মাটিতে জৈব সার মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় জৈব সার দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


ডিমলায় ”ট্রে পদ্ধতিতে” বোরো বীজতলা তৈরি করে চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক

আপডেট সময় : ১২:৪৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফজল কাদির, নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় সমলয় চাষবাদে ”ট্রে পদ্ধতিতে” বোরো বীজতলা তৈরি কওে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ ডিমলা উপজেলায় ৩য় বারের মত করা হচ্ছে।

ডিমলা উত্তর তিত পাড়ায় মাঠে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে ”ট্রে পদ্ধতিতে” বীজতলা ও চারা তৈরির কাজ শেষে রোপণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে চাষিরা লাভবান হবেন বলে আশা উপজেলা কৃষি বিভাগের।

জানা গেছে, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপনের জন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরি আবশ্যক। এছাড়াও বোরোর বীজতলা ”ট্রে পদ্ধতিতে” করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হয় না। এই পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় ডিমলা সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া ভাটিয়াপারা চৌপথি সংলগ্ন তিতপাড়া মাঠের ১৫০ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৯২ জাতের এ ধান চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে উত্তর তিতপাড়া মাঠে ৪ হাজার ৫০০টি ট্রেতে ৬০০ কেজি বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়েছে।

এ বছর ট্রেতে বীজতলা, যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটাও হবে। অর্থাৎ এ বছর যুগোপযোগী আধুনিক পদ্ধতিতেই কৃষি কাজ হবে। এ পদ্ধতিতে চাষিরা কম খরচে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবে।

যুগোপযোগী ও আধুনিক পদ্ধতিতে এই তৃতীয়বার বীজতলা ও চারা তৈরির কাজে সার্বিক তত্ত¡াবধানে রয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মীর হাসান আল বান্না । ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে, এই চাষাবাদ চাষাবাদ খুবই সময়োপযোগী।

এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে ট্রেতে চারা উৎপাদনের ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়াও এই এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাল রপ্তানির ক্ষেত্রেও দারুণ অগ্রগতি হবে।

ডিমলা সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া ভাটিয়াপারা গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমর এবার প্রথমবারের মতো ৫ বিঘা জমি বোরো ধান ট্রেতে বীজতলা, যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটাও হবে। আশা করছি ভালো ফলন পাব।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা( কৃষিবিদ) শামীমা ইয়াসমিন জানান, ট্রের ওপর পরিমাণ মতো জৈব সার ব্যবহার করা হয়। পরে তা ২৫ থেকে ৩০ দিন পর মাদুরের মতো করে তোলা হয়। এরপর রোপণ যšের¿ মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়।

এ পদ্ধতিতে দুইজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেন। ”ট্রে পদ্ধতিতে” চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রæত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ সবল হয়ে বেড়ে ওঠে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, অত্যাধুনিক তথ্যনির্ভর এ প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অনেকে। সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ধান চাষে ফলন বাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য চাল উৎপাদন করাও সম্ভব হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মীর হাসান আল বান্না বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে চারা রোপণ করলে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করতে হয়। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে ট্রেতে বীজ বপন করতে মাটিতে জৈব সার মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় জৈব সার দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারেন।