সৈয়দপুর ০১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দার্জিলিং যেন এক ‘অ্যাক্সিডেন্টাল জিওগ্রাফি’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১১:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনলাইন ডেস্কঃ সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা চরিত্রের মতে, বাংলার ভৌগোলিক গঠনে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে গেছে। এখানে শস্য-শ্যামলাও মেলে, আছে রুক্ষতাও। গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার মতো নদী যেমন আছে, তেমনি আছে সমুদ্র। আবার উত্তরে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। এটা যেন একটা ‘অ্যাক্সিডেন্টাল জিওগ্রাফি’।

লম্বা ছুটিতে যখন কোথাও যাওয়ার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে উঠল, তখন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রুক্ষতা অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। তীব্র গরমে সাধারণ কাজের জন্যও ঘরের বাইরে টেকা দায়। ফেলুদার কথাটাই তখন কাজে দিল। এই গরমে প্রশান্তি পেতে দার্জিলিংই সেরা। আবার ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি মানেই, ঘটনার শুরু দার্জিলিং থেকে।

ভ্রমণের তারিখ ঠিক হওয়ার পর দিন যেন আর যেতে চায় না। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ঠিক হলো যাত্রা শুরু হবে ২৮ জুলাই শুক্রবার। এদিন সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় মৈত্রী এক্সপ্রেস। সব বগিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া জনপ্রতি ২০৭০ টাকা। সঙ্গে ভ্রমণ কর ৫০০। উঠতে হবে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে।

জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। তাই সীমানা পার হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে ঠিকঠাকভাবে আছে কি না সে এক মহা দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার কোথায় গিয়ে থাকব, ট্রেন থেকে নামার পর স্টেশন থেকে বের হওয়ার রাস্তা চিনব কি না, কেউ আবার ভুলভাল বুঝিয়ে সস্তা কোনো হোটেলে তুলে দেবে কি না, কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ওখানে তো সাহায্যের কেউ নেই ইত্যাদি… ইত্যাদি। অথচ দেশের ভেতর এসব সামলানো কোনো ব্যাপারই না। শুধু বিদেশ বলেই মনের এমন দশা।

২৭ জুলাই বিকেল ৪টা নাগাদ ট্রেন থামে কলকাতা রেলওয়ে স্টেশনে। বই পড়ে, সিনেমায় দেখে, গান শুনে মনে মনে কলকাতা শহর বেশ চেনা। কিন্তু বাস্তবে…? সে গল্প অন্য লেখায় বলা যাবে। আপাতত কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়া যাক বাগডোগরার উদ্দেশে।

বাগডোগরা শিলিগুড়ির একটি শহর। এখানেই বিমানবন্দর। কলকাতা থেকে ভাড়া কত, তা যাত্রার আগে অনলাইনে দেখে নেয়া ভালো। বিমানবন্দরের সামনেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। আছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) ট্যুরিস্ট বাস (এসি)। ৪৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে নামিয়ে দেবে দার্জিলিং শহরের প্রাণকেন্দ্র মল রোডে।

বাগডোগরা থেকে যাত্রা শুরুর মুহূর্তেই নামে শ্রাবণের বৃষ্টি। বলতে গেলে একেবারে ঝুমবৃষ্টি। বাসে আমিসহ যাত্রী সংখ্যা তিনজন। সঙ্গে চালক আর তার সহকারী। এই সময়টায় দার্জিলিংয়ে পর্যটক খরা চলে। সে কারণেই বাসের আসন ফাঁকা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সড়কের দুপাশে চা-বাগান রেখে বাস উঠতে শুরু করল পাহাড়ি পথে। বাসের একপাশের জানালায় পাহাড়ের বুক, অপর পাশে খাদ আর হালকা কুয়াশার মতো জমা মেঘ। সে বর্ণনা দেয়া যাক অঞ্জন দত্তের গানে, ‘খাদের ধারের রেলিংটা, সেই দুষ্টু দোদো সিরিংটা, আমার শৈশবের দার্জিলিংটা/চ্যাপ্টা ঠোঁটের ভালোবাসা, খুদে চোখে কত আশা, যখন তখন সাদা কুয়াশা।’

দার্জিলিংয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে অঞ্জন লিখেছেন এ গান। বড় বয়সে সে গানের সূত্র ধরে আবার দার্জিলিংয়ে ফিরতে চেয়েছেন অঞ্জনের বন্ধু কবীর সুমন। গেয়েছেন, ‘ভোরের কুয়াশা খেলনার রেলগাড়ি, পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি/চলো অঞ্জন ছুটিতে দার্জিলিংয়ে, মাউথ অর্গ্যান পকেটেই থাক রাখা, তাল দিয়ে যাবে রেল গাড়িটার চাকা।’

দুপুর পেরিয়ে দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং রেলস্টেশনের সামনে পৌঁছালাম বিকেলে। বৃষ্টি তখন বিরতি দিয়েছে। এই স্টেশন পেরোনোর পর কানে এল দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের হুইসেল। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলছে ট্রেন। আসার আগে কত গল্প শুনেছি… সেই হিমালয়ান রেল, দার্জিলিংয়ের পাহাড়, মেঘ, মানুষ এখন চোখের সামনে।

কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে পথের দুধারে স্থায়ী বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় দলবেঁধে বাড়ি ফিরছে খুদে শিক্ষার্থীরা। কোনো পরিবারের নানা বয়সী সদস্যরা আবার বাড়ির সদর দরজায় বসে গল্পে মশগুল। অঞ্জন দত্তের কাঞ্চনজঙ্ঘা গানের সেই নীলচে পাহাড়ি মেয়ের চোখেও চোখ পড়তে পারে এ পথে।

আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম রাত্রীযাপন করব মল রোডের কোনো এক হোটেলে। বিশেষ কারণ বলতে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র। এর একটি গল্পের নাম আবার দার্জিলিং জমজমাট। সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় এর শুটিং হয়েছে মল রোডে। বাস থেকে নামার পর চালকের সহকারী হোটেল ঠিক করে দিলেন। নাম ডলফিন হোটেল। মল রোডের যে জায়গায় অঞ্জন দত্তের ‘মার্ডার ইন দা হিলস’ ওয়েব সিরিজের কিছু দৃশ্যের শুটিং হয়েছে, সেখানেই হোটেলটা। তবে এমন জনপ্রিয় জায়গায় থাকার অসুবিধাও আছে। হোটেল ভাড়া বেশি। প্রতি রাতে ভাড়া নিয়েছে দুই হাজার রুপি। হোটেল স্টাফদের আতিথেয়তায় যা পরে আর বোঝা মনে হয়নি।

নিজেই সিনেমার চরিত্রে

একবার ভাবুন তো জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা মোহাব্বতে-তে শাহরুখ খানের জায়গায় আপনিই সেন্ট পলস স্কুলের ছাত্র। অথবা ‘বারফি’র রণবীর কাপুর হয়ে প্রেম করছেন মিষ্টি হাসির মেয়ে ইলিয়েনা ডি ক্রুজের সঙ্গে। দার্জিলিংয়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে এমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

জাকির হুসাইন রোডে সেন্ট পলস স্কুল। মোহাব্বতে সিনেমার বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছে এই স্কুলে। ভেতরে ঢুকতে মানা। তবে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের ছবি তোলার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। আবার চৌরাস্তায় গেলে পাবেন কেভেন্টার্স রেস্তোরাঁ। বারফি সিনেমায় এ রেস্তোরাঁয় বসে ইলিয়েনাকে প্রেম নিবেদন করেন রণবীর। পছন্দের মানুষ সঙ্গে থাকলে তাকেও ভেবে নিতে পারেন জীবন সিনেমার কোনো এক বাস্তব চরিত্র।

জেনে রাখা ভালো

দার্জিলিংয়ে ঘুরতে হলে গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে। দর্শনীয় স্থানের সংখ্যার ওপর ভাড়ার কিছুটা তারতম্য হয়। অফ সিজনে পনেরো শ থেকে ২ হাজারে পেয়ে যেতে পারেন। তবে পিক সিজনে ভাড়া বেশি। সারা দিনের চুক্তিতে নিয়ে যাবে টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, পিস প্যাগোডা, হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট।

রাতের দার্জিলিং উপভোগ করতে যেতে পারেন গ্লিনারিস ও জয়ি’স পাব-এ। চৌরাস্তাতেই আছে ফিয়েস্তা। খাওয়ার পাশাপাশি লাইভ কনসার্ট, জন লেনন বা বিটলসের গান শুনে সময়টা মন্দ কাটে না।

দার্জিলিংয়ে ছিলাম দুই রাত তিন দিন। পরবর্তী গন্তব্য সিকিমের গ্যাংটক। সেখানে কোনো গণ্ডগোল বাধে কি না সে আশঙ্কা নিয়েই যাত্রা হলো শুরু। মল রোডে পড়ে রইল কোনো এক শরতে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার বাসনা।

লেখকঃ সাদিকুর রহমান (সূত্রঃ দৈনিক বাংলা)

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


দার্জিলিং যেন এক ‘অ্যাক্সিডেন্টাল জিওগ্রাফি’

আপডেট সময় : ০৬:১১:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

অনলাইন ডেস্কঃ সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা চরিত্রের মতে, বাংলার ভৌগোলিক গঠনে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে গেছে। এখানে শস্য-শ্যামলাও মেলে, আছে রুক্ষতাও। গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার মতো নদী যেমন আছে, তেমনি আছে সমুদ্র। আবার উত্তরে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। এটা যেন একটা ‘অ্যাক্সিডেন্টাল জিওগ্রাফি’।

লম্বা ছুটিতে যখন কোথাও যাওয়ার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে উঠল, তখন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রুক্ষতা অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। তীব্র গরমে সাধারণ কাজের জন্যও ঘরের বাইরে টেকা দায়। ফেলুদার কথাটাই তখন কাজে দিল। এই গরমে প্রশান্তি পেতে দার্জিলিংই সেরা। আবার ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি মানেই, ঘটনার শুরু দার্জিলিং থেকে।

ভ্রমণের তারিখ ঠিক হওয়ার পর দিন যেন আর যেতে চায় না। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ঠিক হলো যাত্রা শুরু হবে ২৮ জুলাই শুক্রবার। এদিন সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় মৈত্রী এক্সপ্রেস। সব বগিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া জনপ্রতি ২০৭০ টাকা। সঙ্গে ভ্রমণ কর ৫০০। উঠতে হবে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে।

জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। তাই সীমানা পার হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে ঠিকঠাকভাবে আছে কি না সে এক মহা দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার কোথায় গিয়ে থাকব, ট্রেন থেকে নামার পর স্টেশন থেকে বের হওয়ার রাস্তা চিনব কি না, কেউ আবার ভুলভাল বুঝিয়ে সস্তা কোনো হোটেলে তুলে দেবে কি না, কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ওখানে তো সাহায্যের কেউ নেই ইত্যাদি… ইত্যাদি। অথচ দেশের ভেতর এসব সামলানো কোনো ব্যাপারই না। শুধু বিদেশ বলেই মনের এমন দশা।

২৭ জুলাই বিকেল ৪টা নাগাদ ট্রেন থামে কলকাতা রেলওয়ে স্টেশনে। বই পড়ে, সিনেমায় দেখে, গান শুনে মনে মনে কলকাতা শহর বেশ চেনা। কিন্তু বাস্তবে…? সে গল্প অন্য লেখায় বলা যাবে। আপাতত কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়া যাক বাগডোগরার উদ্দেশে।

বাগডোগরা শিলিগুড়ির একটি শহর। এখানেই বিমানবন্দর। কলকাতা থেকে ভাড়া কত, তা যাত্রার আগে অনলাইনে দেখে নেয়া ভালো। বিমানবন্দরের সামনেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। আছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) ট্যুরিস্ট বাস (এসি)। ৪৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে নামিয়ে দেবে দার্জিলিং শহরের প্রাণকেন্দ্র মল রোডে।

বাগডোগরা থেকে যাত্রা শুরুর মুহূর্তেই নামে শ্রাবণের বৃষ্টি। বলতে গেলে একেবারে ঝুমবৃষ্টি। বাসে আমিসহ যাত্রী সংখ্যা তিনজন। সঙ্গে চালক আর তার সহকারী। এই সময়টায় দার্জিলিংয়ে পর্যটক খরা চলে। সে কারণেই বাসের আসন ফাঁকা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সড়কের দুপাশে চা-বাগান রেখে বাস উঠতে শুরু করল পাহাড়ি পথে। বাসের একপাশের জানালায় পাহাড়ের বুক, অপর পাশে খাদ আর হালকা কুয়াশার মতো জমা মেঘ। সে বর্ণনা দেয়া যাক অঞ্জন দত্তের গানে, ‘খাদের ধারের রেলিংটা, সেই দুষ্টু দোদো সিরিংটা, আমার শৈশবের দার্জিলিংটা/চ্যাপ্টা ঠোঁটের ভালোবাসা, খুদে চোখে কত আশা, যখন তখন সাদা কুয়াশা।’

দার্জিলিংয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে অঞ্জন লিখেছেন এ গান। বড় বয়সে সে গানের সূত্র ধরে আবার দার্জিলিংয়ে ফিরতে চেয়েছেন অঞ্জনের বন্ধু কবীর সুমন। গেয়েছেন, ‘ভোরের কুয়াশা খেলনার রেলগাড়ি, পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি/চলো অঞ্জন ছুটিতে দার্জিলিংয়ে, মাউথ অর্গ্যান পকেটেই থাক রাখা, তাল দিয়ে যাবে রেল গাড়িটার চাকা।’

দুপুর পেরিয়ে দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং রেলস্টেশনের সামনে পৌঁছালাম বিকেলে। বৃষ্টি তখন বিরতি দিয়েছে। এই স্টেশন পেরোনোর পর কানে এল দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের হুইসেল। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলছে ট্রেন। আসার আগে কত গল্প শুনেছি… সেই হিমালয়ান রেল, দার্জিলিংয়ের পাহাড়, মেঘ, মানুষ এখন চোখের সামনে।

কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে পথের দুধারে স্থায়ী বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় দলবেঁধে বাড়ি ফিরছে খুদে শিক্ষার্থীরা। কোনো পরিবারের নানা বয়সী সদস্যরা আবার বাড়ির সদর দরজায় বসে গল্পে মশগুল। অঞ্জন দত্তের কাঞ্চনজঙ্ঘা গানের সেই নীলচে পাহাড়ি মেয়ের চোখেও চোখ পড়তে পারে এ পথে।

আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম রাত্রীযাপন করব মল রোডের কোনো এক হোটেলে। বিশেষ কারণ বলতে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র। এর একটি গল্পের নাম আবার দার্জিলিং জমজমাট। সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় এর শুটিং হয়েছে মল রোডে। বাস থেকে নামার পর চালকের সহকারী হোটেল ঠিক করে দিলেন। নাম ডলফিন হোটেল। মল রোডের যে জায়গায় অঞ্জন দত্তের ‘মার্ডার ইন দা হিলস’ ওয়েব সিরিজের কিছু দৃশ্যের শুটিং হয়েছে, সেখানেই হোটেলটা। তবে এমন জনপ্রিয় জায়গায় থাকার অসুবিধাও আছে। হোটেল ভাড়া বেশি। প্রতি রাতে ভাড়া নিয়েছে দুই হাজার রুপি। হোটেল স্টাফদের আতিথেয়তায় যা পরে আর বোঝা মনে হয়নি।

নিজেই সিনেমার চরিত্রে

একবার ভাবুন তো জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা মোহাব্বতে-তে শাহরুখ খানের জায়গায় আপনিই সেন্ট পলস স্কুলের ছাত্র। অথবা ‘বারফি’র রণবীর কাপুর হয়ে প্রেম করছেন মিষ্টি হাসির মেয়ে ইলিয়েনা ডি ক্রুজের সঙ্গে। দার্জিলিংয়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে এমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

জাকির হুসাইন রোডে সেন্ট পলস স্কুল। মোহাব্বতে সিনেমার বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছে এই স্কুলে। ভেতরে ঢুকতে মানা। তবে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের ছবি তোলার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। আবার চৌরাস্তায় গেলে পাবেন কেভেন্টার্স রেস্তোরাঁ। বারফি সিনেমায় এ রেস্তোরাঁয় বসে ইলিয়েনাকে প্রেম নিবেদন করেন রণবীর। পছন্দের মানুষ সঙ্গে থাকলে তাকেও ভেবে নিতে পারেন জীবন সিনেমার কোনো এক বাস্তব চরিত্র।

জেনে রাখা ভালো

দার্জিলিংয়ে ঘুরতে হলে গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে। দর্শনীয় স্থানের সংখ্যার ওপর ভাড়ার কিছুটা তারতম্য হয়। অফ সিজনে পনেরো শ থেকে ২ হাজারে পেয়ে যেতে পারেন। তবে পিক সিজনে ভাড়া বেশি। সারা দিনের চুক্তিতে নিয়ে যাবে টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, পিস প্যাগোডা, হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট।

রাতের দার্জিলিং উপভোগ করতে যেতে পারেন গ্লিনারিস ও জয়ি’স পাব-এ। চৌরাস্তাতেই আছে ফিয়েস্তা। খাওয়ার পাশাপাশি লাইভ কনসার্ট, জন লেনন বা বিটলসের গান শুনে সময়টা মন্দ কাটে না।

দার্জিলিংয়ে ছিলাম দুই রাত তিন দিন। পরবর্তী গন্তব্য সিকিমের গ্যাংটক। সেখানে কোনো গণ্ডগোল বাধে কি না সে আশঙ্কা নিয়েই যাত্রা হলো শুরু। মল রোডে পড়ে রইল কোনো এক শরতে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার বাসনা।

লেখকঃ সাদিকুর রহমান (সূত্রঃ দৈনিক বাংলা)