নীলফামারীতে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক কুচি করে শ্রমিকের কর্মসংস্থানঃ কমছে পরিবেশ দূষণ

- আপডেট সময় : ০৯:৫৩:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

ফজল কাদিরঃ পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের পণ্য পরিবেশ দূষণ করছে। ফেলে দেওয়া এসব ক্ষতিকর পন্য সংগ্রহ করার দৃশ্য চোখে পরে কর্মহীন মানুষদের। তারা বিক্রি করে কারখানায়। পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত। প্লাস্টিক হচ্ছে কুচি। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ কমছে, তেমনি অনকেরই হচ্ছে কর্মসংস্থান। এ খাতে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় তিন শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিকের কুচি তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কাজ করেন ৪০-৫০ জন শ্রমিক। আর এসব কারখানায় প্লাস্টিকের পুরানা বোতল, ভাঙ্গা প্লাস্টিকের চেয়ার, স্যালাইনের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কভার, সিরিঞ্জসহ বিভিন প্লাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙ্গে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্লাস্টিকের কারখানায়। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় হয় বৈদেশিক মুদ্রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙা প্লাস্টিক বর্জ্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্লাস্টিকের কুচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আবার কেউ কেউ সেই স্তুপ থেকে একদিকে বোতল, কোথাও স্যালাইনের ব্যাগ, কোথাও সিরিঞ্জ, কোথাও বাতলের ছিপি ভাগ করে রাখছেন। আর এসব পণ্য মেশিনে ভেঙ্গে তরি করা হবে কুচি।
সদর ইটাখোলা বাদিয়ার মোড়ে কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক রঞ্জনা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে সারাদিন প্লাস্টিকের দ্রব্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে মেশিনের মাধ্যম তৈরি করা হয় কুচি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই আড়াইশ টাকা। তবে আগে বাড়িতে সংসারের কাজ করতাম আর বসেই থাকতাম। অনেক অভাব ছিল। বর্তমানে সংসারে অভাব নাই বললেই চলে।
জয়ত্রি রানী নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। বর্তমানে এখান কাজ করে যা পাই তা দিয়েই আমার সংসার ভালোই চলছে।
কারখানার মেশিন চালক সোবহান বলেন, শ্রমিকরা প্লাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রাখেন। সে সব দ্রব্য নিয়ে এসে মেশিন দিয়ে কুচি তৈরি করা হয়। এরপর এসব কুচি ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। পরব বস্তায় ভরে প্যাকেট জাত করা হয় বিক্রির জন্য।
বলী রানী বলেন, স্বামী মারা যাওয়ায় অন্যর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। তিন সন্তানক নিয়া এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে কোনো রকম দিন কাটতো। এখন প্লাস্টিক বর্জ্য কারখানায় কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছি।
কারখানার মালিক কমল চন্দ্র বলেন, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ও হকারদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পণ্য কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। কুচিগুলা আমরা মিলারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। কুচির আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে। আর এই বোতলের কুচি যায় বিদেশে।
আনোয়ারুল ইসলাম নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, পথ-ঘাট এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখান দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরনের ব্যবস্থা থাকে।
পুরা প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে তিনি বলেন, কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত, তাহল তো পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক বেশি ব্যবহারের কারনে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব দিন দিন ফসল কমে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে কুচি তৈরি হওয়ার কারনে পরিবেশ রক্ষা পাবে। প্লাস্টিকের কুচি পরিবশ রক্ষার পাশাপাশি মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণ বলেন, পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাশাপাশি এসব কারখানায় কাজ করে অনেকেই হচ্ছেন স্বাবলম্বী।