নীলফামারীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারে ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠাঁই

- আপডেট সময় : ০৩:০৭:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩ ৮০ বার পড়া হয়েছে

ফজল কাদিরঃ নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরি গ্রামের শারিরীক প্রতিবন্ধী ভুবন চন্দ্র রায়। তিনি পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করলেও এক সময় সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ঠাঁই হয় আকাশকুড়ি গ্রামের বোনের ভিটায়। বোনের ভিটার এক কোণে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে ও ভিক্ষা করে কোন রকম দিনাতিপাত করছিলেন। কিন্তু নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহারের সার্বিক সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ২ শতক জমিসহ আধাপাকা ঘর পেয়ে বদলে যায় প্রতিবন্ধী ভুবন চন্দ্রের জীবন। এখন ঘরের সাথে ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ ও হাঁস মুরগি পালন করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলছে তার সংসার।
পাশাপাশি পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতাও। অসহনীয় জীবন থেকে বদলে যাওয়া আর এক নারী হচ্ছে পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামের ময়না বেগম বিয়ের পর ভালোই চলছিল তার সংসার জীবন। কিন্তু বিরল এক রোগ শরীলে বাসা বেঁধে তছনছ করে দেয় তার জীবন। এক পা কেটে ফেলতে হয় ময়নার। পা কেটে ফেলার পর তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। স্বামী তাকে এ অবস্থায় ফেলে অন্যত্র আর একটি বিয়ে করেন। অবশেষে ময়নার ঠাঁই হয় ভাইয়ের ভিটায়। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাই ভাবীর মানসিক নির্যাতন সহ্য করে তাকে থাকতে হয়। মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সে যাত্রায় বেঁচে যান ময়না। বর্তমানে ময়না সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ২ শতক জমিসহ আধাপাকা ঘর পেয়ে এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
ফাঁকা জায়গায় সবজি চাষ ও হাঁস মুরগি পালন করে এখন বদলে গেছে তার জীবন-জীবিকা ভুবন ও ময়নার মতো এরকম খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী নুরুল হক, সোনারায় ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভূমিহীন আরমান হোসেন, পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পলাশবাড়ী গ্রামের ভূমিহীন রাবেয়া বেগম, লক্ষীচাপ ইউনিয়নেরদুবাছুরি বগুড়া পাড়া গ্রামের ভূমিহীন শামিম হোসেন, কচুকাটা ইউনিয়নের ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী লতা আক্তার,টুপামারি ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের শাহিন ইসলাম, বাড়াইপাড়ার কৃষ্ণ রায়,পুরাতন ষ্টেশন গ্রামের শাহিদ আলমসহ অনেক ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী, ভূমিহীন ও অসহায় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে বদলে গেছে তাদের জীবন। এসব ভূমিহীনরা আগে রেলষ্টেশনে, বাজারে ও অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে কোন রকম দিনাতিপাত করছিল। তাদের ছিল না কোন পয়ঃনিস্কাশন ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। তাদের ছেলে-মেয়েরা যত্রতত্র মল ত্যাগ করত। ডোবা-নালার নোংরা পানিতে গোসল ও থালা-বাসন পরিস্কার করত। এতে করে তাদের রোগ বালাই লেগে থাকত।
কিন্তু সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কঠোর নির্দ্দেশনায় প্রকৃত এই অসহায় ভূমিহীন মানুষেরা ঠাঁই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরে। ২শতক জমিসহঘর,বাথরুম ও সবজি চাষের জন্য ফাঁকা জায়গা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া এসব মানুষদের এখন আর যত্রতত্র মল ত্যাগ, ডোবা-নালায় গোসল করতে হয় না। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে এখন স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন।
শাহিন ইসলাম, প্রতিবন্ধী নূরুল হক,ভবন চন্দ্র, রাবেয়া বেগম.ময়না বেগম সহ অনেক জানান ভেবেছিলাম আমাদের অন্যের জমিতে করা ঝুপড়ি ঘরে সারাজীবন পার করতে হবে। স্বপ্নও ভাবিনি শেষ বয়সে এসে পাকা ঘরে থাকতে পারব। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আজ আমরা পাকা ঘরে বসবাস করতে পারছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে ঘর পাওয়ার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দীর্ঘায়ূ কামনা করেছেন।
সূত্র মতে নীলফামারী সদর উপজেলায় মোট ৭৪৯টি ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের পূর্নবাসন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বক্ষনিক তদারকিতে সরকারি নির্দেশনা ও প্রকল্পের সিডিউল অনুযায়ী টেকসই ও মজবুত করে নির্মাণ করা হয় এই সব ঘর।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের ইট,সিমেন্ট,বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী। দক্ষ নির্মান শ্রমিকদের নিপুন হাতে তৈরী হয় ভূমিহীনদের এইসব ঘর।
বসবাসকারীরা গনমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এখন পর্যন্ত কারো ঘরে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়নি।সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জানান প্রকল্পেরসি ডিউল অনুযায়ী মানসম্মত উপকরণ দিয়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজে সন্তষ্ট ভূমিহীনরা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এইসব ঘর নির্মাণ কাজের গুণগতমান নিশ্চিতে আমরা ছিলাম বদ্ধ পরিকর। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মানকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ যে,গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নীলফামারী সদর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেন।