ফুটবল ফেলে চলে গেলেন পেলে

- আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ৪৪ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্কঃ পৃথিবীতে এই তিনটে শব্দের প্রচার সব থেকে বেশি হয়েছিল একটা সময়। পেলে নিজেও সদর্পে সে কথা বলতেন। তা শুনে এক জার্মান সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘মিস্টার পেলে, আপনি কি নিজেকে জেসাস ক্রাইস্ট মনে করেন নাকি?’ পেলের হাসিমাখা উত্তর, ‘তা তো বলিনি। বলেছি, জেসাস ক্রাইস্ট আর কোকা কোলার মতো আমার নামও পৃথিবীর সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।’
এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। যাঁকে বিশ্ব চেনে পেলে নামে, ফুটবল সম্রাট বলে যাঁর সামনে মাথা নুইয়ে দেয়, সেই তিনি কি না ফুটবল ফেলে চলে গেলেন! দিয়েগো মারাদোনার পর পেলে। এই শোক কাটিয়ে উঠবে কী করে ফুটবল বিশ্ব!
১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপ থেকে শুরু করাই ভাল। ব্রাজিলের সুন্দর ফুটবলের শুরু তো সেই থেকেই। যে জোগো বনিতো-র সৌন্দর্য এখনও চোখে-মুখে মেখে রয়েছেন অগণিত ফুটবল পাগল মানুষ। দিদি-ভাভার ব্রাজিল যে সুন্দর ফুটবলের জন্ম দিয়েছিল, তাকেই লালন-পালন করে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পেলে-গ্যারিঞ্চা। ফুটবল, ব্রাজিল, জোগো বনিতো সব পড়ে রইল। পেলে চলে গেলেন এ কোন দেশে!
এক সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলের কিংবদন্তি দিদি বলেছিলেন, ‘ফুটবলটা আমার প্রেমিকা। ওকে আদর না করলে ও তো কথা শুনবে না। ও যখন আমার কাছে আসবে, আমি তখন এগিয়ে যাব। আমি বললেই ও আমার কথা শুনবে। ও অন্যদিকে যেতে চাইলে আমি বলব, এদিকে এসো। বলটাকে আমি ভালোবাসি; কারণ, বলটা হল আগুন। ওর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে ও আমার পা ভেঙে দেবে। ওকে ভালবাসলে দুর্দান্ত ভালবাসার গল্প তৈরি হবে।
পেলে এই মন্ত্র শিখে নিয়েছিলেন দিদির থেকে। বলটাকে প্রিয়তমার মতো ভালবাসতে শিখেছিলেন। পেলের সঙ্গে বলের সম্পর্ক তাই রূপকথার মতো। ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮১টি গোল। চারটি বিশ্বকাপে (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭০) তাঁর সঙ্গে বলের সেই রূপকথায় মজে ছিল গোটা বিশ্ব।
৮২ বছরের পেলে চেয়েছিলেন মাঠে বসে কাতার বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখবেন। শরীর সায় দেয়নি। সেই কাতার, যেখানে ১৯৭৩ সালে প্রথমবার স্যান্টোসের হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। শরীরে মারণ রোগের থাবা। তার উপর হৃদযন্ত্রে সমস্যা। সারা শরীরে বিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারদের দেওয়া অসংখ্য চোট-আঘাত তাঁকে দমাতে পারেনি। কিন্তু ক্যান্সারের কাছে তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ, সুঠাম শরীর বশ মেনে নিয়েছিল।
বারকয়েক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল পেলেকে। দুশ্চিন্তায় থাকত গোটা বিশ্ব। পেলে বারবার রোগভোগকে ড্রিবল করে ফিরে আসেন। কিন্তু এবার জীবনের ডি-বক্সে ফাইনাল ট্যাকল-এ টাল সামলাতে পারলেন না। যে ট্যাকেল ফেলে দিয়েছিল দিয়েগো মারাদোনাকে। সেই ট্যাকেল-এ এবার পেলে! ফুটবল, জোগো বনিতো, কোকা কোলা… সব পড়ে রইল। পেলে আর জেসাস ক্রাইস্ট অমর হয়েই রইলেন কোথাও।
চলতি বছরেই মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠেছে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে দুনিয়া। তবে বছর পেরোতে না পেরোতেই তীব্র দুঃসংবাদ আছড়ে ফেলল ফুটবল দুনিয়াকে। ৮২ বছরে প্রয়াত হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তি পেলে।
প্রায় এক মাস ধরে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। ক্রিসমাস কেটেছিল হাসপাতালে পরিবারের সঙ্গে। তবে নতুন বছর আর দেখা হল না কিংবদন্তির।বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটায় (বাংলাদেশ সময়) পেলের এজেন্ট জো ফ্রাগা এর উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।