বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয় নি খানসামার উপবালার লাশের তদন্ত

মো: নুরনবী ইসলাম
- আপডেট সময় : ০৬:১০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩ ৪৯ বার পড়া হয়েছে

মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোচিত উপোবালার লাশ উদ্ধারের এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় পরিবার ও এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৯ জুলাই তার ১ বছর পূর্ণ হয়েছে। পরিবারের দাবি, সেদিন সন্ধ্যার দিকে উপবালা রায় বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ী যাওয়ার পথে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়। তবে সেই হত্যাকান্ডের বছর পেরিয়ে গেলেও অতিদ্রুত তদন্ত শেষ করে বিচারের দাবি জানান পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছর ২৯ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। ঐদিন সন্ধ্যার দিকে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পথে ধান ক্ষেতে দুই কন্যা সন্তানের জননী উপবালা রানীর লাশ বিবস্ত্র অবস্থায় পথচারীরা দেখতে পায়। পাশেই নিহতের সাথে ১০ বছরের মেয়ে বিপাশা রাণী রায়কে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায় ৷ পরে পথচারীরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। আর অজ্ঞান শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ঘটনার পর থানা পুলিশের হাত ঘুরে তদন্তের ভার পরেছে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তে। তবে সেখানে মামলা গেলেও নেই কোনো অগ্রগতি। তবে তদন্ত নিয়ে আস্থা হারালেও এখনো বিচারের আশা ছাড়েননি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। আলোচিত উপবালা রানীকে ধর্ষণ ও হত্যা এবং তার ১০ বছরের মেয়ে বিপাশা রায়কে নির্যাতন করার প্রতিবাদে গত বছর ঐ মন্ডপে দূর্গা পূজা বর্জন করেছিলেন তারা। এছাড়াও হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে ইতিপূর্বে ঐ নারীর পরিবার, এলাকাবাসী, পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, রামকলা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমসহ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেসময় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রত সময়ের মধ্যে আসামীদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন। এই হত্যার পরে নিহতের স্বামী নিশান চন্দ্র রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে খানসামা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে থানা পুলিশ পরবর্তী সময়ে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দিনাজপুর ইউনিট। কিন্তু এতদিনেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।
মায়ের প্রসঙ্গে নির্বাক বিপাশার হয়ে কথা বললেন, দাদু-দিমিমা। যেকোনো মূল্যে এই হত্যার বিচার চান তারা। সর্বস্ব দিয়ে বিচারের জন্য লড়ে যাওয়ার কথাও জানালেন। তারা বলেন, এখন মনে হয় এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন না হওয়ার পেছনে স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমাদের ধারণা, এর সঙ্গে এমন কেউ জড়িত, যাদের সামনে আনা যাচ্ছে না। তাই এত দিনেও কূলকিনারা হলো না। তারা আরও বলেন, এতদিন যাবত হত্যার আসামিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় না এনে। আমাদেরকে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। প্রশাসনের বিবেক এবং আইনের বিবেক বলতে কিছুই নেই। প্রশাসন তো আমাদের পাশে নাই, আমরা নিরীহ হয়ে গেছি, আমাদের জীবনে প্রথম এই এত বড় একটা দুর্ঘটনা আমরা কি এই উপবালার নির্মম নির্যাতন হত্যার বিচার কি পাবো না।
এ বিষয়ে নিহতের স্বামী নিশান রায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনায় চরম হতাশায় ভুগছি। নিরুপায় হয়ে দিন কাটাচ্ছি। স্ত্রী হত্যার ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করতেছি।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ধীমান চন্দ্র দাস বলেন, আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্বদিচ্ছা কামনা করছি যেন সংখ্যালঘু পরিবারটি তাদের মেয়েকে নির্যাতন ও স্ত্রী হত্যার সঠিক বিচার পায়।
উপবালার বিষয়ে কথা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর পিবিআই এর উপ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউনুল হক বলেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। আমার সিনিয়র স্যাররা এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন দিক থেকে সঠিক তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই তদন্তে যেন কোন নিরপরাধ মানুষেরও নাম না আসে। কেবল হত্যার সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়ুক। তাই তদন্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে।