সৈয়দপুর ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই পায়নি ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে শহীদ লালবিবি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ৯৪ বার পড়া হয়েছে

মোগল সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে শহীদ লালবিবির সমাধি

চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনলাইন ডেস্কঃ রংপুরে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্য। এসব ঐতিহ্যের কিছু কিছু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষণে রয়েছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রংপুর নগরীর অদূরে মোগল সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে শহীদ লালবিবি সমাধি। তিনি ছিলেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের মা এবং সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের স্ত্রী। ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দান ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে লাল বিবিকে সম্মুখ সমরে হত্যা করে। বর্তমানে এই সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অধিনে হলেও শুধু নাম সর্বস্ব একটি সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই নেই সেখানে। অনাদর অবহেলায় পড়ে রয়েছে লালবিরি সমাধি। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বলছে খুব শিঘ্রই সমাধির সংস্কার করা হবে। এবিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

মাহিগঞ্জ থেকে কিছুটা দক্ষিণে নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের ধর্মদাস এলাকায় রাস্তার পাশেই এই সমাধির অবস্থান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সমাধির ভগ্নদশা। সামাধির সামনে দুটি খালি আগর বাতির প্যাকেট দেখা গেল। মনে হয় এখানে স্থানীয়দের কেউ আগরবাতি জ্বালিয়ে লালবিবিকে এখনও শ্রদ্ধা জানান।

ঐতিহাস সূত্রে জানাগেছে, শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ (১৮৩৭ থেকে ১৮৫৭) এর মাতা ছিলেন লালবিবি এবং সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের স্ত্রী ছিলেন তিনি। লালবিবির বাবা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী ফকির বিদ্রোহের সমরনায়ক শাহজাদা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। তিনি মিঠাপুকুরের ফুলচৌকিতে মোগল সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে আসেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর ময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটলে তৎকালীন মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর জামাতা শাহজাদা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জংকে বাংলার সুবেদার নিয়োগ দেন। সুবেদার নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে রংপুরের ফুলচৌকিতে স্থানান্তর করেন।

ঐতিহাসিকদের মতে ১৮৭৩ সালের দিকে লালবিবি ও সেনানায়ক ভবানী পাঠকসহ অন্যান্যরা বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য নগরমীরগঞ্জের দিকে যাত্রা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তখন ব্রিটিশ সেনানায়ক অকল্যান্ডের অতর্কিত আক্রমণে লালবিবি ও ভবানী পাঠক নিহত হন। সেখানেই একটি দীঘির পাড়ে লালবিবিকে সমাহিত করা হয়। দীঘিটি এখনো সমর দীঘি বা জিহাদ পুকুর নামে পরিচিত। লালবিবি ও ভাবানি পাঠকের সাথে আরও কয়েকজন ফকির বিদ্রোহী শহীদ হন। শহীদ হওয়ার আগে লালবিবি ঘোড়ার পিঠ থেকে যখন লুটিয়ে পড়েন, তখন তিনি ফরিয়াদ করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার এই মৃত্যুকে তুমি কবুল করো। আমার এই শাহাদাত যেন ব্যর্থ না হয়। সম্রাজ্ঞী লালবিবি ও মহারাজ ভবানী পাঠককে হত্যার কাজে সহযোগিতা করার পুরস্কার হিসেবে পায়রাবন্দের টাটি শেখ ও খয়ের উদ্দীন প্রামাণিক ও জনৈক লাহিড়ীকে ৬০ লাখ টাকার অধিক মূল্যমানের জমিদারি দান করে ব্রিটিশরা। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা ইতিহাসে রয়েছে। ইতিহাস লেখক আবুল কাসেম, হায়দার আলী চৌধুরী ও মতিউর রহমান বসনিয়ার লেখা ইতিহাসগ্রন্থ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, লালবিবির সমাধি সংস্কারে জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।

সৌজন্যে- নজরুল মৃধা, রংপুর (বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই পায়নি ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে শহীদ লালবিবি

আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

অনলাইন ডেস্কঃ রংপুরে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্য। এসব ঐতিহ্যের কিছু কিছু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষণে রয়েছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রংপুর নগরীর অদূরে মোগল সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে শহীদ লালবিবি সমাধি। তিনি ছিলেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের মা এবং সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের স্ত্রী। ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দান ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে লাল বিবিকে সম্মুখ সমরে হত্যা করে। বর্তমানে এই সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অধিনে হলেও শুধু নাম সর্বস্ব একটি সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই নেই সেখানে। অনাদর অবহেলায় পড়ে রয়েছে লালবিরি সমাধি। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বলছে খুব শিঘ্রই সমাধির সংস্কার করা হবে। এবিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

মাহিগঞ্জ থেকে কিছুটা দক্ষিণে নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের ধর্মদাস এলাকায় রাস্তার পাশেই এই সমাধির অবস্থান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সমাধির ভগ্নদশা। সামাধির সামনে দুটি খালি আগর বাতির প্যাকেট দেখা গেল। মনে হয় এখানে স্থানীয়দের কেউ আগরবাতি জ্বালিয়ে লালবিবিকে এখনও শ্রদ্ধা জানান।

ঐতিহাস সূত্রে জানাগেছে, শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ (১৮৩৭ থেকে ১৮৫৭) এর মাতা ছিলেন লালবিবি এবং সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের স্ত্রী ছিলেন তিনি। লালবিবির বাবা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী ফকির বিদ্রোহের সমরনায়ক শাহজাদা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। তিনি মিঠাপুকুরের ফুলচৌকিতে মোগল সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে আসেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর ময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটলে তৎকালীন মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর জামাতা শাহজাদা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জংকে বাংলার সুবেদার নিয়োগ দেন। সুবেদার নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে রংপুরের ফুলচৌকিতে স্থানান্তর করেন।

ঐতিহাসিকদের মতে ১৮৭৩ সালের দিকে লালবিবি ও সেনানায়ক ভবানী পাঠকসহ অন্যান্যরা বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য নগরমীরগঞ্জের দিকে যাত্রা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তখন ব্রিটিশ সেনানায়ক অকল্যান্ডের অতর্কিত আক্রমণে লালবিবি ও ভবানী পাঠক নিহত হন। সেখানেই একটি দীঘির পাড়ে লালবিবিকে সমাহিত করা হয়। দীঘিটি এখনো সমর দীঘি বা জিহাদ পুকুর নামে পরিচিত। লালবিবি ও ভাবানি পাঠকের সাথে আরও কয়েকজন ফকির বিদ্রোহী শহীদ হন। শহীদ হওয়ার আগে লালবিবি ঘোড়ার পিঠ থেকে যখন লুটিয়ে পড়েন, তখন তিনি ফরিয়াদ করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার এই মৃত্যুকে তুমি কবুল করো। আমার এই শাহাদাত যেন ব্যর্থ না হয়। সম্রাজ্ঞী লালবিবি ও মহারাজ ভবানী পাঠককে হত্যার কাজে সহযোগিতা করার পুরস্কার হিসেবে পায়রাবন্দের টাটি শেখ ও খয়ের উদ্দীন প্রামাণিক ও জনৈক লাহিড়ীকে ৬০ লাখ টাকার অধিক মূল্যমানের জমিদারি দান করে ব্রিটিশরা। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা ইতিহাসে রয়েছে। ইতিহাস লেখক আবুল কাসেম, হায়দার আলী চৌধুরী ও মতিউর রহমান বসনিয়ার লেখা ইতিহাসগ্রন্থ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, লালবিবির সমাধি সংস্কারে জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।

সৌজন্যে- নজরুল মৃধা, রংপুর (বাংলাদেশ প্রতিদিন)।