সৈয়দপুর ১০:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্মকর্তার স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, স্বামীর পরকীয়ার বলি

মো: জাকির হোসেন
  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩ ৮৮ বার পড়া হয়েছে
চোখ২৪.নেট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ জাকির হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানার সিএইচআর সপের ইনচার্জ সোহেল রানার স্ত্রী ফারজানা ববির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

রবিবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৫ টায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নীলফামারী মর্গে প্রেরণ করেছে।

স্বামীর পরকীয়ার জেরে এই মৃত্যু বলে অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ে কারখানার ওই কর্মকর্তা স্ত্রী ও জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে শহরের নয়াটোলা ডিআইবি রোডের সাবেক পূবালী ব্যাংক কর্মচারী মোজাফ্ফর হোসেনের বহুতল ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। সেখানেই এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে ফারজানাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জান্নাত শারমিন চৌধুরী তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়ায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাৎক্ষনিক বিষয়টি আরএমও কে জানান। আরএমও সৈয়পুর থানা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করার পর থানায় নিয়ে আসেন। এরপর ময়না তদন্তের জন্য লাশ নীলফামারী মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ হ্যাভি রিপিয়ারিং সপের কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, কয়েকদিন থেকে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য চলছিল। একারণে আজ সকালে নাস্তা না করেই ডিউটিতে যেতে হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১ টায় দুপুরের বিরতিতে বাসায় এসে দেখি তখনও কোন রান্না হয়নি এবং আমার স্ত্রী বিছানায় শুয়ে আছে। এমতাবস্থায় আমি বাচ্চা দুটাকে নিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করার সময় আমার স্ত্রী তার ঘরের দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়। এরপর ছুটে এসে অনেক ডাকাডাকি করলেও তার কোন সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আশপাশের লোকজনকে ডাকি। তারা এসে দরজায় আঘাত করলেও কোন কাজ না হওয়ায় বাইরে থেকে গ্রিল মেশিন এনে দরজা কেটে দেখি সে ফ্যানের সাথে ঝুলছে। এমতাবস্থায় দ্রুত তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি।

হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, ওই নারীকে মূলতঃ মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু গলায় দাগ থাকায় আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তাই পুলিশ এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বামীর জিম্মায় লাশ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশই প্রকৃত কারণ জানাতে পারবেন।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মফিজুল হক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে লাশের গলায় কালো দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের অন্য কোথায় আঘাতের চিহ্ন নেই। অধিকতার তদন্তের জন্য লাশ নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হচ্ছে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তার স্বামীকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে মৃত্যুর কারণ নিয়ে গুঞ্জণ চলছে যে, স্বামী সোহেল রানার পরকীয়ার কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কারখানার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিএইচআর সপের বড় বাবুর দায়িত্বে থাকা রিমু রানী রায়ের সাথে ইনচার্জ সোহেল রানার পরকীয়ার সম্পর্ক। এই খবর ওই সপ ছাড়াও কারখানার অন্যান্য সপেও ব্যাপক আলোচিত বিষয়। গুঞ্জণ থেকে বিষয়টি কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কানে গেলে গত শনিবার রিমু রানী রায়কে ট্রেনিং স্কুলে বদলী করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সোহেল রানা তার স্ত্রী ফারজানার সাথে কথা কাটাকাটিসহ মারধর করে। এমতাবস্থায় রবিবার সকালে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে একটি সূত্রের অভিযোগ ফারজানাকে তার স্বামী নিজে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। ময়নাতদন্ত হলেই এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মোঃ সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমি উপরে কথা বলতেছি। পরে আপনাদের সাথে কথা বলবো।

রিমু রানী রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি নিজে সিএইচআর সপ থেকে ট্রান্সফার নিয়েছি। কোন অনিয়ম বা অপবাদের কারণে বদলী করা হয়নি। আমার সাথে কারো কোন অবৈধ সম্পর্ক নাই। কেউ এমন কথা বললে তা প্রমান করুক। মোবাইল ম্যাসেজ বা কল রেকর্ড বা অন্য কিছু সামনে আনুক। সবাইতো আমাকে পছন্দ করেনা। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, নিহত ফারজানা ববি বগুড়া জেলার দুঁপচাচিয়া গ্রামের গুনাহার পুকুরপাড়া এলাকার মৃত শাহিন সরকারের মেয়ে। আর সোহেল রানা নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকদারপাড়া গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ফারজানার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় সোহেল রানার পরিবার তাদের বিয়ে এখনও মেনে নেয়নি। ৬ বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের তিন বছর বয়সী জমজ দুই মেয়ে রয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য


সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্মকর্তার স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, স্বামীর পরকীয়ার বলি

আপডেট সময় : ১২:০৯:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

মোঃ জাকির হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানার সিএইচআর সপের ইনচার্জ সোহেল রানার স্ত্রী ফারজানা ববির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

রবিবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৫ টায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নীলফামারী মর্গে প্রেরণ করেছে।

স্বামীর পরকীয়ার জেরে এই মৃত্যু বলে অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ে কারখানার ওই কর্মকর্তা স্ত্রী ও জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে শহরের নয়াটোলা ডিআইবি রোডের সাবেক পূবালী ব্যাংক কর্মচারী মোজাফ্ফর হোসেনের বহুতল ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। সেখানেই এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে ফারজানাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জান্নাত শারমিন চৌধুরী তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়ায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাৎক্ষনিক বিষয়টি আরএমও কে জানান। আরএমও সৈয়পুর থানা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করার পর থানায় নিয়ে আসেন। এরপর ময়না তদন্তের জন্য লাশ নীলফামারী মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ হ্যাভি রিপিয়ারিং সপের কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, কয়েকদিন থেকে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য চলছিল। একারণে আজ সকালে নাস্তা না করেই ডিউটিতে যেতে হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১ টায় দুপুরের বিরতিতে বাসায় এসে দেখি তখনও কোন রান্না হয়নি এবং আমার স্ত্রী বিছানায় শুয়ে আছে। এমতাবস্থায় আমি বাচ্চা দুটাকে নিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করার সময় আমার স্ত্রী তার ঘরের দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়। এরপর ছুটে এসে অনেক ডাকাডাকি করলেও তার কোন সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আশপাশের লোকজনকে ডাকি। তারা এসে দরজায় আঘাত করলেও কোন কাজ না হওয়ায় বাইরে থেকে গ্রিল মেশিন এনে দরজা কেটে দেখি সে ফ্যানের সাথে ঝুলছে। এমতাবস্থায় দ্রুত তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি।

হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, ওই নারীকে মূলতঃ মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু গলায় দাগ থাকায় আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তাই পুলিশ এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বামীর জিম্মায় লাশ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশই প্রকৃত কারণ জানাতে পারবেন।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মফিজুল হক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে লাশের গলায় কালো দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের অন্য কোথায় আঘাতের চিহ্ন নেই। অধিকতার তদন্তের জন্য লাশ নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হচ্ছে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তার স্বামীকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে মৃত্যুর কারণ নিয়ে গুঞ্জণ চলছে যে, স্বামী সোহেল রানার পরকীয়ার কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কারখানার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিএইচআর সপের বড় বাবুর দায়িত্বে থাকা রিমু রানী রায়ের সাথে ইনচার্জ সোহেল রানার পরকীয়ার সম্পর্ক। এই খবর ওই সপ ছাড়াও কারখানার অন্যান্য সপেও ব্যাপক আলোচিত বিষয়। গুঞ্জণ থেকে বিষয়টি কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কানে গেলে গত শনিবার রিমু রানী রায়কে ট্রেনিং স্কুলে বদলী করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সোহেল রানা তার স্ত্রী ফারজানার সাথে কথা কাটাকাটিসহ মারধর করে। এমতাবস্থায় রবিবার সকালে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে একটি সূত্রের অভিযোগ ফারজানাকে তার স্বামী নিজে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। ময়নাতদন্ত হলেই এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মোঃ সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমি উপরে কথা বলতেছি। পরে আপনাদের সাথে কথা বলবো।

রিমু রানী রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি নিজে সিএইচআর সপ থেকে ট্রান্সফার নিয়েছি। কোন অনিয়ম বা অপবাদের কারণে বদলী করা হয়নি। আমার সাথে কারো কোন অবৈধ সম্পর্ক নাই। কেউ এমন কথা বললে তা প্রমান করুক। মোবাইল ম্যাসেজ বা কল রেকর্ড বা অন্য কিছু সামনে আনুক। সবাইতো আমাকে পছন্দ করেনা। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, নিহত ফারজানা ববি বগুড়া জেলার দুঁপচাচিয়া গ্রামের গুনাহার পুকুরপাড়া এলাকার মৃত শাহিন সরকারের মেয়ে। আর সোহেল রানা নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকদারপাড়া গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ফারজানার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় সোহেল রানার পরিবার তাদের বিয়ে এখনও মেনে নেয়নি। ৬ বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের তিন বছর বয়সী জমজ দুই মেয়ে রয়েছে।